চার অধ্যায়

“কিচ্ছু জানি নে।”

এলা অতীনের পা জড়িয়ে ধরে বললে, “আমি তোমার সেবিকা, তোমার চরণের সেবিকা, আমাকে ফেলে যেয়ো না, ফেলে যেয়ো না।”

একটুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে রইল অতীন। দ্বিতীয়বার হুইস্‌‍লের শব্দ এল। অতীন গর্জন করে বললে, “ছেড়ে দাও।” বলে নিজেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল।

তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। এলা মেঝের উপর উপুড় হয়ে পড়ে। তার বুকের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে, তার চোখে জল নেই। এমন সময় গম্ভীর গলার ডাক শুনতে পেল, “এলা।”

চমকে উঠে বসল। দেখলে ইলেকট্রিক টর্চ হাতে ইন্দ্রনাথ। তখনই উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “ফিরিয়ে আনুন অন্তুকে।”

“সে-কথা থাক্‌। এখানে কেন এলে?”

“বিপদ আছে জেনেই এসেছি।”

তীব্র ভর্ৎসনার সুরে ইন্দ্রনাথ বললেন, “তোমার বিপদের কথা কে ভাবছে? এখানকার খবর তোমাকে কে দিলে?”

“বটু।”

“তবু বুঝলে না মতলব?”

“বোঝবার বুদ্ধি আমার ছিল না। প্রাণ হাঁপিয়ে উঠেছিল।”

“তোমাকে মারতে পারলে এখনই মারতুম। যাও ঘরে ফিরে। ট্যাক্‌‍সি আছে বাইরে।”


চতুর্থ অধ্যায়
“আবার অখিল!– পালিয়েছিস বোডিং থেকে! তোর সঙ্গে কোনোমতে পারবার জো নেই। বার বার বলছি, এ বাড়িতে খবরদার আসিস নে। মরবি যে।”

অখিল কোনো উত্তর না দিয়ে গলার সুর নামিয়ে বললে, “একজন দাড়িওয়ালা কে পিছনের পাঁচিল টপকিয়ে বাগানে ঢুকল। তাই তোমার এ-ঘরে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলুম।– ঐ শোনো পায়ের শব্দ।” অখিল তার ছুরির সব-চেয়ে মোটা ফলাটা খুলে দাঁড়াল।

এলা বললে, “ছুরি খুলতে হবে না তোমাকে, বীরপুরুষ। দে বলছি।” ওর হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিলে।

সিঁড়ি থেকে আওয়াজ এল, “ভয় নেই, আমি অন্তু।”

মুহূর্তে এলার মুখ পাংশুবর্ণ হয়ে এল– বললে, “দে দরজা খুলে।”

দরজা খুলে দিয়ে অখিল জিজ্ঞাসা করলে, “সেই দাড়িওআলা কোথায়?”

“দাড়ি নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে বাগানে, বাকি মানুষটাকে পাবে এইখানেই। যাও খোঁজ করো গে দাড়ির।” অখিল চলে গেল।

এলা পাথরের মূর্তির মতো ক্ষণকাল একদৃষ্টে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বললে, “অন্তু, এ কী চেহারা তোমার?”

অতীন বললে, “মনোহর নয়।”

“তবে কি সত্যি?”

“কী সত্যি?”