শাপমোচন
রইলেম।”

রাজা গাইলেন—

  বাহিরে ভুল ভাঙবে যখন

  অন্তরে ভুল ভাঙবে কি।

বিষাদ বিষে জ্বলে শেষে

রসের প্রসাদ মাঙবে কি।

রৌদ্রদাহ হলে সারা নামবে   কি ওর বর্ষাধারা,

লাজের রাঙা মিটলে হৃদয়

প্রেমের রঙে রাঙবে কি।

যতই যাবে দূরের পানে

বাঁধন ততই কঠিন হয়ে টানবে না কি ব্যথার টানে।

অভিমানের কালো মেঘে   বাদল হাওয়া লাগবে বেগে,

  নয়নজলের আবেগ তখন কোনোই বাধা মানবে কি।

 

মহিষী স্তব্ধ হয়ে রইল। রাজা বললে, “আচ্ছা,কথা তোমার রাখব,কিন্তু তাতে ইচ্ছা তোমার পূর্ণ হবে না।”

জ্বলে উঠল আলো,আবরণ গেল ঘুচে,দেখা হল। টলে উঠল যুগলের সংসার। “কী অন্যায়, কী নিষ্ঠুর
বঞ্চনা” বলতে বলতে কমলিকা ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল। তাকে ডাক দিলে রাজার জগৎ থেকে—

 

না, যেয়ো না, যেয়ো নাকো।

মিলনপিয়াসি মোরা, কথা রাখ

আজও বকুল আপনহারা, হায় রে,

ফুল ফোটানো হয় নি সারা, সাজি ভরে নি,

পথিক ওগো, থাকো থাকো॥

 

গেল বহুদূরে,বনের মধ্যে মৃগয়ার জন্যে যে নির্জন রাজগৃহ আছে সেইখানে। কুয়াশায় শুকতারার মতো লজ্জায় সে আচ্ছন্ন।

রাত্রি যখন দুইপ্রহর,আধোঘুমে সে শুনতে পায় এক বীণাধ্বনির আর্তরাগিণী। স্বপ্নে বহুদূরের আভাস আসে। মনে হয়,এই সুর চিরদিনের চেনা। চিরবিরহের সঞ্চিত অশ্রু বুকের মধ্যে উছলে ওঠে।

সখী, আঁধারে একেলা ঘর মন মানে না।

কিসের পিয়াসে কোথা যে যাবে সে, পথ জানে না।

ঝরঝর নীরে, নিবিড় তিমিরে, সজল সমীরে গো,

যেন কার বাণী কভু প্রাণে আনে কভু আনে না।