প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নিমাই। বিয়ে কার সঙ্গে হবে।
শিবচরণ। ভয় নেই রে বাপু, তুই যাকে চাস তারই সঙ্গে হবে। আমার ছেলে হয়ে তুই যে এত টাকা চিনেছিস তা তো জানতুম না; তা সেই বাগবাজারের ট্যাকশালের সঙ্গেই তোর বিয়ে স্থির করে এসেছি।
নিমাই। সে কী বাবা। আপনার মতের বিরুদ্ধে আমি বিয়ে করতে চাই নে— বিশেষ, আপনি নিবারণবাবুকে কথা দিয়েছেন—
শিবচরণ। (অনেকক্ষণ হাঁ করিয়া নিমাইয়ের মুখের দিকে নিরীক্ষণ) তুই খেপেছিস না আমি খেপেছি আমাকে কে বুঝিয়ে দেবে! কথাটা একটু পরিষ্কার করে বল্, আমি ভালো করে বুঝি।
নিমাই। আমি সে চৌধুরীদের মেয়ে বিয়ে করব না।
শিবচরণ। চৌধুরীদের মেয়ে বিয়ে করবি নে! তবে কাকে করবি!
নিমাই। নিবারণবাবুর মেয়ে ইন্দুমতীকে।
শিবচরণ। (উচ্চৈঃস্বরে) কী! হতভাগা পাজি লক্ষ্মীছাড়া বেটা! যখন ইন্দুমতীর সঙ্গে তোর সম্বন্ধ করি তখন বলিস কাদম্বিনীকে বিয়ে করবি, আবার যখন কাদম্বিনীর সঙ্গে সম্বন্ধ করি তখন বলিস ইন্দুমতীকে বিয়ে করবি— তুই তোর বুড়ো বাপকে একবার বাগবাজার একবার মির্জাপুর খেপিয়ে নিয়ে নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতে চাস!
নিমাই। আমাকে মাপ করুন বাবা, আমার একটা মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছিল—
শিবচরণ। ভুল কী রে বেটা! তোকে সেই বাগবাজারে বিয়ে করতেই হবে! তাদের কোনো পুরুষে চিনি নে, আমি নিজে গিয়ে তাদের স্তুতিমিনতি করে এলুম, যেন আমারই কন্যেদায় হয়েছে—তার পরে যখন সমস্ত ঠিকঠাক হয়ে গেল, আজ তারা আশীর্বাদ করতে আসবে, তখন বলে কিনা আমি বিয়ে করব না। আমি এখন চৌধুরীদের বলি কী।
চন্দ্রকান্ত। (নিমাইয়ের প্রতি) সমস্ত শুনলুম। ভালো একটি গোল বাধিয়েছ যা হোক। —এই যে ডাক্তারবাবু, ভালো আছেন তো?
শিবচরণ। ভালো আর থাকতে দিলে কই। এই দেখো-না চন্দর, ওঁর নিজেরই কথামত একটি পাত্রী স্থির করলুম—যখন সমস্ত স্থির হয়ে গেল তখন বলে কিনা, তাকে বিয়ে করব না। আমি এখন চৌধুরীদের বলি কী।
নিমাই। বাবা, আপনি তাদের একটু বুঝিয়ে বললেই—
শিবচরণ। তোমার মাথা! তাদের বোঝাতে হবে আমার ভীমরতি ধরেছে আর আমার ছেলেটি একটি আস্ত খ্যাপা—তা তাদের বুঝতে বিলম্ব হবে না।
চন্দ্রকান্ত। আপনি কিছু ভাববেন না। সে মেয়েটির আর-একটি পাত্র জুটিয়ে দিলেই হবে।
শিবচরণ। সে তেমন মেয়েই নয়। তার টাকা আছে ঢের, কিন্তু চেহারা দেখে পাত্র এগোয় না। আমার বংশের এই অকালকুষমাণ্ডের মতো হঠাৎ এতবড়ো তুমি দ্বিতীয় আর কোথায় পাবে যে তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে।
চন্দ্রকান্ত। সে আমার উপর ভার রইল। আমি সমস্ত ঠিকঠাক করে দেব। এখন নিশ্চিন্ত মনে নিবারণবাবুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ স্থির করুন।
শিবচরণ। যদি পার চন্দর তো বড়ো উপকার হয়। এই বাগবাজারের হাত থেকে মানে মানে নিস্তার পেলে বাঁচি। এ দিকে আমি নিবারণের কাছে মুখ দেখাতে পারছি নে, পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
চন্দ্রকান্ত। সেজন্যে কোনো ভাবনা নেই। আমি প্রায় অর্ধেক কাজ গুছিয়ে এসে তবে আপনাকে বলছি। এখন বাকিটুকু সেরে