মুকুট
তুমি বনে গিয়া যত জন্তু মারিয়া আন, আর আমরা কেবল লাউ কুমড়া কচু কাঁঠাল শিকার করিয়া আনি!”

ইশা খাঁ পরম হৃষ্ট হইয়া হাসিতে লাগিলেন- সস্নেহে ইন্দ্রকুমারের পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, “যুবরাজ ঠিক কথা বলিতেছেন পুত্র। তোমার তীর সকলের আগে গিয়া ছোটে এবং নির্ঘাত গিয়া লাগে। তোমার সঙ্গে কে পারিয়া উঠিবে!”

ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “না না দাদা, ঠাট্টা নয়— যাইতে হইবে। তুমি না গেলে কে শিকার করিতে যাইবে!”

যুবরাজ বলিলেন, “আচ্ছা, চলো। আজ রাজধরের শিকারের ইচ্ছা হইয়াছে, উঁহাকে নিরাশ করিব না।”

সহাস্য ইন্দ্রকুমার চকিতের মধ্যে ম্লান হইয়া বলিলেন, “কেন দাদা, আমার ইচ্ছা হইয়াছে বলিয়া কি যাইতে নাই।”

চন্দ্রনারায়ণ বলিলেন, “সেকী কথা ভাই, তোমার সঙ্গে তো রোজই শিকারে যাইতেছি” —

ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “তাই সেটা পুরাতন হইয়া গেছে।”

চন্দ্রনারায়ণ বিমর্ষ হইয়া বলিলেন, “তুমি আমার কথা এমন করিয়া ভুল বুঝিলে বড়ো ব্যথা লাগে।”

ইন্দ্রকুমার হাসিয়া তাড়াতাড়ি বলিলেন, “না, দাদা, আমি ঠাট্টা করিতেছিলাম। শিকারে যাইব না তো কী! চলো তার আয়োজন করি গে।”

ইশা খাঁ মনে মনে কহিলেন, ‘ইন্দ্রকুমার বুকে দশটা বাণ সহিতে পারে, কিন্তু দাদার একটু সামান্য অনাদর সহিতে পারে না।’

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

শিকারের বন্দোবস্ত সমস্ত স্থির হইলে পরে রাজধর আস্তে আস্তে ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী কমলাদেবীর কক্ষে গিয়া উপস্থিত। কমলাদেবী হাসিয়া বলিলেন, “এ কী ঠাকুরপো। একেবারে তীরধনুক বর্মচর্ম লইয়া যে। আমাকে মারিবে নাকি।”

রাজধর বলিলেন, “ঠাকুরানী, আমরা আজ তিন ভাই শিকার করিতে যাইব, তাই এই বেশ।”

কমলাদেবী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “তিন ভাই! তুমিও যাইবে না কি! আজ তিন ভাই একত্র হইবে! এ তো ভালো লক্ষণ নয়। এ যে ত্র্যহস্পর্শ হইল।”

যেন বড়ো ঠাট্টা হইল এই ভাবে রাজধর হা হা করিয়া হাসিলেন, কিন্তু বিশেষ কিছু বলিলেন না।

কমলাদেবী কহিলেন, “না না, তাহা হইবে না— রোজ রোজ শিকার করিতে যাইবেন আর আমি ঘরে বসিয়া ভাবিয়া মরি।”

রাজধর বলিলেন, “আজ আবার রাত্রে শিকার।”

কমলাদেবী মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “সে কখনোই হইবে না। দেখিব আজ কেমন করিয়া যান।”

রাজধর বলিলেন, “ঠাকুরানী, এক কাজ করো, ধনুকবাণগুলি লুকাইয়া রাখো।”

কমলাদেবী কহিলেন, “কোথায় লুকাইব।”

রাজধর। আমার কাছে দাও, আমি লুকাইয়া রাখিব।

কমলাদেবী হাসিয়া কহিলেন, “মন্দ কথা নয় সে তো বড়ো রঙ্গ হইবে।” কিন্তু মনে-মনে বলিলেন, ‘তোমার একটা কী মতলব আছে। তুমি যে কেবল আমার উপকার করিতে আসিয়াছ তাহা বোধ হয় না।’

“এসো, অস্ত্রশালায় এসো” বলিয়া কমলাদেবী রাজধরকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। চাবি লইয়া ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার দ্বার খুলিয়া দিলেন। রাজধর যেমন ভিতরে প্রবেশ করিলেন অমনি কমলাদেবী দ্বারে তালা লাগাইয়া দিলেন, রাজধর ঘরের মধ্যে বন্ধ