প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিল্বন কহিলেন, “শান্তি সুখ আপনার মধ্যেই আছে, কেবল জানিতে পাই না। ভগবান এ যেন মাটির হাঁড়িতে অমৃত রাখিয়াছেন, অমৃত আছে বলিয়া কাহারও বিশ্বাস হয় না। আঘাত লাগিয়া হাঁড়ি ভাঙিলে তবে অনেক সময়ে সুধার আস্বাদ পাই। হায় হায়, এমন জিনিসও এমন জায়গায় থাকে!”
এমন সময়ে একটা অভ্রভেদী হো হো শব্দ উঠিল। দেখিতে দেখিতে দুর্গের মধ্যে ছোটোবড়ো নানাবিধ ছেলে আসিয়া পড়িল। রাজা বিল্বনকে কহিলেন, “এই দেখো ঠাকুর, আমার ধ্রুব।” বলিয়া ছেলেদের দেখাইয়া দিলেন।
বিল্বন কহিলেন, “যাহার প্রসাদে তুমি এতগুলি ছেলে পাইয়াছ সেও তোমাকে ভোলে নাই, তাহাকেও আনিয়া দিই।”
বলিয়া বাহিরে গেলেন। কিঞ্চিৎ বিলম্বে ধ্রুবকে কোলে করিয়া আনিয়া রাজার কোলে দিলেন। রাজা তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ডাকিলেন, “ধ্রুব!”
ধ্রুব কিছুই বলিল না, গম্ভীর ভাবে নীরবে রাজার কাঁধে মাথা দিয়া পড়িয়া রহিল। বহুদিন পরে প্রথম মিলনে বালকের ক্ষুদ্র হৃদয়ের মধ্যে যেন একপ্রকার অস্ফুট অভিমান ও লজ্জার উদয় হইল। রাজাকে জড়াইয়া মুখ লুকাইয়া রহিল।
রাজা বলিলেন, “আর সব হইল, কেবল নক্ষত্র আমাকে ভাই বলিল না।”
সুজা তীব্রভাবে কহিলেন, “মহারাজ, আর সকলেই অতি সহজেই ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে, কেবল নিজের ভাই করে না।
” সুজার হৃদয় হইতে এখনো শেল উৎপাটিত হয় নাই।
এইখানে বলা আবশ্যক তিনটি বালক সুজার তিন ছদ্মবেশী কন্যা। সুজা মক্কা যাইবার উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়াছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গুরুতর বর্ষার প্রাদুর্ভাবে একখানিও জাহাজ পাইলেন না। অবশেষে হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিবার পথে, গোবিন্দমাণিক্যের সহিত দুর্গে দেখা হয়। কিছুদিন দুর্গে বাস করিয়া সুজা সংবাদ পাইলেন এখনো সম্রাটসৈন্য তাঁহাকে সন্ধান করিতেছে। গোবিন্দমাণিক্য যানাদি ও বিস্তর অনুচর-সমেত তাঁহার বন্ধু আরাকান-পতির নিকটে তাঁহাকে প্রেরণ করেন। যাইবার সময় সুজা তাঁহাকে বহুমূল্য তরবারি উপহারস্বরূপ দান করেন।
ইতিমধ্যে রাজা রঘুপতি ও বিল্বনে মিলিয়া সমস্ত গ্রামকে যেন সচেতন করিয়া তুলিলেন। রাজার দুর্গ সমস্ত গ্রামের প্রাণ হইয়া উঠিল।
এইরূপে ছয় বৎসর কাটিয়া গেলে ছত্রমাণিক্যের মৃত্যু হইল। গোবিন্দমাণিক্যকে সিংহাসনে ফিরাইয়া লইবার জন্য ত্রিপুরা হইতে দূত আসিল।
গোবিন্দমাণিক্য প্রথমে বলিলেন, “আমি রাজ্যে ফিরিব না।”
বিল্বন কহিলেন, “সে হইবে না মহারাজ! ধর্ম যখন স্বয়ং দ্বারে আসিয়া আহ্বান করিতেছেন তখন তাঁহাকে অবহেলা করিবেন না।”
রাজা তাঁহার ছাত্রদের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আমার এতদিনকার আশা অসমাপ্ত, এতদিনকার কার্য অসম্পূর্ণ রহিবে?”
বিল্বন কহিলেন, “এখানে তোমার কার্য আমি করিব।”
রাজা কহিলেন, “তুমি যদি এখানে থাক তাহা হইলে আমার সেখানকার কার্য অসম্পূর্ণ হইবে।”
বিল্বন কহিলেন, “না মহারাজ, এখন আমাকে আর তোমার আবশ্যক নাই। তুমি এখন আপনার প্রতি আপনি সম্পূর্ণ নির্ভর