প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কুড়ানি চুল বাঁধিতে বাঁধিতে অসম্পূর্ণ বেণী পিঠের উপরে দুলাইয়া হরকুমারবাবুর ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার হরিণের মতো চোখদুটি দুজনের উপর রাখিয়া সে চাহিয়া রহিল।
যতীন ইতস্তত করিতেছে দেখিয়া হরকুমার তাহাকে কহিলেন, “ বৃথা সংকোচ করিতেছ, যতীন। উহাকে দেখিতে মস্ত ডাগর, কিন্তু কচি ডাবের মতো উহার ভিতরে কেবল জল ছল্ছল্ করিতেছে — এখনো শাঁসের রেখা মাত্র দেখা দেয় নাই। ও কিছুই বোঝে না — উহাকে তুমি নারী বলিয়া ভ্রম করিয়ো না, ও বনের হরিণী। ”
যতীন তাহার ডাক্তারী কর্তব্য সাধন করিতে লাগিল — কুড়ানি কিছুমাত্র কুণ্ঠা প্রকাশ করিল না। যতীন কহিল, “শরীরযন্ত্রের কোনো বিকার তো বোঝা গেল না। ”
পটল ফস্ করিয়া ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “ হৃদয়যন্ত্রেরও কোনো বিকার ঘটে নাই। তার পরীক্ষা দেখিতে চাও? ”
বলিয়া কুড়ানির কাছে গিয়া তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া কহিল, “ও কুড়ানি, আমার এই ভাইটিকে তোর পছন্দ হইয়াছে?”
কুড়ানি মাথা হেলাইয়া কহিল, “ হাঁ। ”
পটল কহিল, “ আমার ভাইকে তুই বিয়ে করিবি? ”
সে আবার মাথা হেলাইয়া কহিল, “ হাঁ। ”
পটল এবং হরকুমারবাবু হাসিয়া উঠিলেন। কুড়ানি কৌতুকের মর্ম না বুঝিয়া তাঁহাদের অনুকরণে মুখখানি হাসিতে ভরিয়া চাহিয়া রহিল।
যতীন লাল হইয়া উঠিয়া ব্যস্ত হইয়া কহিল, “ আঃ, পটল, তুমি বাড়াবাড়ি করিতেছ — ভারি অন্যায়। হরকুমারবাবু, আপনি পটলকে বড়ো বেশি প্রশ্রয় দিয়া থাকেন। ”
হরকুমার কহিলেন, “ নহিলে আমিও যে উঁহার কাছে প্রশ্রয় প্রত্যাশা করিতে পারি না। কিন্তু যতীন, কুড়ানিকে তুমি জান না বলিয়াই অত ব্যস্ত হইতেছ। তুমি লজ্জা করিয়া কুড়ানিকে সুদ্ধ লজ্জা করিতে শিখাইবে দেখিতেছি। উহাকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল তুমি খাওয়াইয়ো না। সকলে উহাকে লইয়া কৌতুক করিয়াছে — তুমি যদি মাঝের থেকে গাম্ভীর্য দেখাও তবে সেটা উহার পক্ষে একটা অসংগত ব্যাপার হইবে। ”
পটল। ঐজন্যই তো যতীনের সঙ্গে আমার কোনোকালেই বনিল না, ছেলেবেলা থেকে কেবলই ঝগড়া চলিতেছে — ও বড়ো গম্ভীর।
হরকুমার। ঝগড়া করাটা বুঝি এমনি করিয়া একেবারে অভ্যাস হইয়া গেছে — ভাই সরিয়া পড়িয়াছেন, এখন —
পটল। ফের মিথ্যা কথা। তোমার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া সুখ নাই — আমি চেষ্টাও করি না।
হরকুমার। আমি গোড়াতেই হার মানিয়া যাই।
পটল। বড়ো কর্মই করো। গোড়ায় হার না মানিয়া শেষে হার মানিলে কত খুশি হইতাম।