বসন্ত
ওগো     মোহন, তোমার উত্তরীয়
        গন্ধে আমার ভরে নিয়ো,
        উজাড় করে দেব পায়ে
            বকুল বেলা জুঁই।
        দখিনসাগর পার হয়ে-যে
           এলে পথিক তুমি।
আমার      সকল দেব অতিথিরে
          আমি বনভূমি।
আমার      কুলায়ভরা রয়েছে গান,
        সব তোমারেই করেছি দান,
        দেবার কাঙাল করে আমায়
          চরণ যখন ছুঁই।

আম্রকুঞ্জ
ফল ফলাবার আশা আমি মনেই রাখি নি রে।
আজ আমি তাই মুকুল ঝরাই দক্ষিণসমীরে।
       বসন্তগান পাখিরা গায়,
       বাতাসে তার সুর ঝরে যায়,
       মুকুল ঝরার ব্যাকুল খেলা
            আমারই সেই রাগিনী রে।
জানি নে ভাই, ভাবি নে তাই কী হবে মোর দশা
যখন আমার সারা হবে সকল ঝরা খসা।
       এই কথা মোর শূন্য ডালে
       বাজবে সেদিন তালে তালে,
       ‘চরম দেওয়ায় সব দিয়েছি
            মধুর মধুযামিনীরে।’

রাজা। ভাবখানা বুঝেছি কবি।

কবি। কী বুঝলেন।

রাজা। ‘ফল ফলাব’ বলে কোমর বেঁধে বসলে ফল ফলে না। মনের আনন্দে ‘ফল চাই নে’ বলতে পারলে, ফল আপনি ফলে ওঠে। আম্রকুঞ্জ মুকুল ঝরাতে ভরসা পায় বলেই তার ফল ধরে।

কবি। মহারাজ, এটা যেন উপদেশের মতো শোনাচ্ছে।

রাজা। ঠিক কথা। তা হলে গান ধরো।