যোগাযোগ
খোঁচা নেই? ঠিক সত্যি করে বলো।”

“আছে কি না তা আমি খুব স্পষ্ট করে জানি নে।”

“স্বামীর সম্মতি পেয়েছ?”

“না চাইতেই তিনি সম্মতি দিয়েছেন।”

“রাগ করে?”

“তাও আমি ঠিক জানি নে; বলেছেন, ডেকে পাঠাবার আগে আমার যাবার দরকার নেই।”

“সে কোনো কাজের কথা নয়, তার আগেই যেয়ো, নিজে থেকেই যেয়ো।”

“গেলে হুকুম মানা হবে না।”

“আচ্ছা, সে আমি দেখব।”

দাদা আজ এই-যে বিষম বিপদে পড়েছে, এর সমস্ত অপরাধ কুমুর, এ কথা না মনে করে কুমু থাকতে পারল না। নিজেকে মারতে ইচ্ছে করে, খুব কঠিন মার। শুনেছে এমন সন্ন্যাসী আছে যারা কণ্টকশয্যায় শুয়ে থাকে, ও সেইরকম করে শুতে রাজি, যদি তাতে কোনো ফল পায়। কোনো যোগী কোনো সিদ্ধপুরুষ যদি ওকে রাস্তা দেখিয়ে দেয় তা হলে চিরদিন তার কাছে বিকিয়ে থাকতে পারে। নিশ্চয়ই তেমন কেউ আছে, কিন্তু কোথায় তাকে পাওয়া যায়? যদি মেয়েমানুষ না হত তা হলে যা হয় একটা কিছু উপায় সে করতই। কিন্তু মেজদাদা কী করছেন? একলা দাদার ঘাড়ে সমস্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কোন্‌ প্রাণে ইংলণ্ডে বসে আছেন?

কুমু ঘরে ঢুকে দেখে বিপ্রদাস কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বিছানায় পড়ে আছে। এমন করলে শরীর কি সারতে পারে! বিরুদ্ধ ভাগ্যের দুয়ারে মাথা কুটে মরতে ইচ্ছে করে।

দাদার শিয়রের কাছে বসে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে কুমু বললে, “মেজদাদা কবে আসবেন?”

“তা তো বলতে পারি নে।”

“তাকে আসতে লেখো-না।”

“কেন বল্‌ দেখি!”

“সংসারের সমস্ত দায় একলা তোমারই ঘাড়ে, এ তুমি বইবে কী করে?”

“কারো-বা থাকে দাবি, কারো-বা থাকে দায়; এই দুই নিয়ে সংসার। দায়টাকেই আমি আমার করেছি, এই আমি অন্যকে দেব কেন?”

“আমি যদি পুরুষমানুষ হতুম জোর করে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতুম।”

“তা হলেই তো বুঝতে পারছিস কুমু, দায় ঘাড়ে নেবার একটা লোভ আছে। তুই নিজে নিতে পারছিস নে বলেই তোর মেজদাদাকে দিয়ে সাধ মেটাতে চাস। কেন আমিই-বা কী অপরাধ করেছি।”

“দাদা, তুমি টাকা ধার করতে এসেছ?”

“কিসের থেকে বুঝলি?”

“তোমার মুখ দেখেই বুঝেছি। আচ্ছা, আমি কি কিছুই করতে পারি নে?”

“কী করে বলো?”

“এই মনে করো, কোনো দলিলে সই করে। আমার সইয়ের কি কোনো দামই নেই?”

“খুবই দাম আছে; সে আমাদের কাছে, মহাজনের কাছে নয়।”