বদনাম
ফেলে বললেন, “হায় রে, এমন সুযোগটাও কেটে গেল! ”

বসে বসে তাঁর নবাবি ছাঁদের গোঁফ-জোড়াটাতে তা দিতে লাগলেন, আর থেকে থেকে ফুঁসে উঠলেন অধৈর্যে। তাঁর জন্য তৈরি দ্বিতীয় দফার খিচুড়ি তাঁর মুখে রুচল না।

এই গেল এই গল্পের প্রথম পালা।

দ্বিতীয়

সদু স্বামীকে বললে, “কী গো, তুমি যে নৃত্য জুড়ে দিয়েছ! আজ তোমার মাটিতে পা পড়ছে না। ডিস্ট্রিক্‌‌ট্‌ পুলিসের সুপারিণ্টেন্ডের নাগাল পেয়েছ নাকি।”

“পেয়েছি বৈকি।”

“কী রকম শুনি।”

“আমাদের যে চর, নিতাই চক্রবর্তী, সে ওদের ওখানে চরগিরি করে। তার কাছে শোনা গেল আজ মোচকাঠির জঙ্গলে ওদের একটা মস্ত সভা হবে। সেটাকে ঘেরাও করবার বন্দোবস্ত হচ্ছে। ভারী জঙ্গল, আমরা আগে থাকতে লুকিয়ে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে তন্ন তন্ন করে সার্ভে করে নিয়েছি। কোথাও আর লুকিয়ে পালাবার ফাঁক থাকবে না।”

“তোমাদের বুদ্ধির ফাঁকের মধ্যে দিয়ে বড়ো বড়ো ফুটোই থাকবে। অনেক বার তো লোক হাসিয়েছ, আর কেন। এবারে ক্ষান্ত দাও।”

“সে কি কথা সদু। এমন সুযোগ আর পাব না।”

“আমি তোমাকে বলছি, আমার কথা শোনো—ও মোচকাঠির জঙ্গল ও-সব বাজে কথা। সে তোমাদেরই ঘরের আনাচে কানাচে ঘুরছে। তোমাদের মুখের উপরে তুড়ি মেরে দেবে দৌড়, এ আমি তোমাকে বলে দিলুম।”

“তা, তুমি যদি লুকিয়ে তাদের ঘরের খবর দাও, তা হলে সবই সম্ভব হবে।”

“দেখো, অমন চালাকি কোরো না। বোকামি করতে হয় পেট ভরে করো, অনেক বার করেছ, কিন্তু নিজের ঘরের বউকে নিয়ে—”

কথাটা চাপা পড়ল চোখের উপর আঁচল চাপার সঙ্গে।

“সদু, আমি দেখেছি যে এই একটা বিষয়ে তোমার ঠাট্টাটুকুও সয় না।”

“তা সত্যি, পুলিসের ঠাট্টাতেও যে গায়ে দাঁত বসে। এখন কিছু খেয়ে নেবে কি না বলো।”

“তা নেব, সময় আছে, সব একেবারে পাকাপাকি ঠিকঠাক হয়ে গেছে।”

“দেখো, আমি সত্যি কথাই বলব। তোমরা যা কানাকানি কর তা যদি জানতে পারতুম তা হলে ওদের কাছে ফাঁস করে দেওয়া কর্তব্য মনে করতুম।”

“সর্বনাশ, কিছু শুনেছ নাকি তুমি।”

“তোমাদের সংসারে চোখ কান খুলে রাখতেই হয়, কিছু কানে যায় বৈকি।”

“কানে যায়, আর তার পরে?”

“আর তার পরে চণ্ডীদাস বলেছেন, ‘কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিয়া দিল প্রাণ’।”