শৈশবসঙ্গীত
প্রতি ব্রজগরজনে,           ললিতা শঙ্কিতমনে
            সুরেশে জড়ায় দৃঢ়তর।
অবসন্ন পদ তায়,             প্রতি পদে বাধা পায়,
            তরাসেতে তনু থর থর।
ঝলিল বিদ্যুৎ-শিখা,           ভগ্ন এক অট্টালিকা
            অদূরেতে প্রকাশিল তথা—
কক্ষ এক হতে তার,          মুমূর্ষ আলোকধার
            কহে কি রহস্যময় কথা!
চলিল আলয়-পানে,          দোঁহে আশ্বাসিত প্রাণে,
            সহসা জাগিল নীরবতা—
উঠিল সঙ্গীতস্বর            বালার হৃদয়-’পর
            প্রবেশিল দু-একটি কথা—
    “পাগলিনী, তোর লাগি কি আমি করিব বল্‌।
    কোথায় রাখিব তোরে খুঁজে না পাই ভূমণ্ডল।”
 কাঁপিছে বালার বুক,          নীল হয়ে গেছে মুখ,
            কপোলে বহিছে ঘর্ম্মজল—
ঘুরিছে মস্তক  তার,          চরণ  চলে না আর,
            শরীরে নাইক বিন্দুবল।
তবুও অবশমনে                 অলক্ষিত আকর্ষণে
            চলিল সে ভীষণ আলয়ে—
অঙ্গন হইয়া পার              খুলি এক জীর্ণ দ্বার
            গৃহে পদার্পিল ভয়ে ভয়ে।
ভগ্ন ইষ্টকের ‘পরে,           দীপ মিট্‌ মিট্‌ করে,
            বিদ্যুৎ ঝলকে বাতায়নে—
ভেদি গৃহভিত্তি যত,           বটমূল শত শত
            হেথা হোথা পড়িছে নয়নে।
বিছানো শুকানো পাতা,       শুয়ে আছে রাখি মাথা,
            পুরুষ একটি শ্রান্তকায়—
অতি শীর্ণদেহ তার,           এলোথেলো জটাভার,
            মুখশ্রী বিবর্ণ অতি ভায়।
জ্যোতিহীন নেত্র তাঁর,       পাতাটিও তুলিবার