ভুবনমোহিনীপ্রতিভা, অবসরসরোজিনী ও দুঃখসঙ্গিনী

এই লও, স্রোতে তব দিনু ভাসাইয়া

কমলকুসুমমালা, দিযে করে তার।

ইত্যাদি।

এই ইংরাজি কবিতা ও বাংলা কবিতাগুলিতে অতি অল্প প্রভেদ আছে।

বাঙালি ভায়ারা করি নিবেদন

জোড় করি বন্দি ও রাঙা চরণ!

যা-কিছু বলিনু ভালোরি কারণ

ভাবি দেখো মনে কোরো না রাগ।

রাগ তো কর না দাসত্ব করিতে

রাগ তো কর না নিগার হইতে

পাদুকা বহিতে অধীন রহিতে

হৃদয়ে লেপিয়া কলঙ্কদাগ!

এ-সব করিতে যদি নাই

আমার কথায় রেগো না দোহাই

বাড়িবে কলঙ্ক আরও তা হলে!

অবসরসরোজিনীর কবি ভাবিতেছেন তিনি হাসিতে হাসিতে, উপহাস করিতে করিতে খুব বুঝি অর্থ স্পর্শ করিতেছেন, কিন্তু ‘বাঙালি ভায়ারা’ ইত্যাদিতে কবিতার উপর অভক্তি ভিন্ন আর কোনো ভাব মনে আসে না। তাঁহার মনোরচিত কবিতার মধ্যে ছন্দ আছে বটে, কিন্তু ভাব নাই। তাঁহার প্রেমের কবিতার মধ্যে কৃত্রিমতা ও আড়ম্বর আছে বটে কিন্তু অনুরাগের জ্বলন্ত তেজ নাই। তিনি ‘কেন ভালোবাসি?’র ন্যায় একটি কবিতা লখিতে পারেন না এবং ভুবনমোহিনীরও তাঁহার ‘প্রিয়তমা হাসিল’র ন্যায় কবিতা মনে আসিতে পারে না। সরোজিনীর মধ্যে রূপক তুলনার কৌশলবাক্যের আড়ম্বর আছে, কিন্তু সেগুলি হৃদয় স্পর্শ করে না। ভুবনমোহিনীর কবিতার মধ্যে অর্থহীনতা, অসম্বন্ধ রচনা অনেক আছে তথাপি সেগুলি সত্ত্বেও কতকগুলি কবিতা হৃদয় স্পর্শ করে।

যদিও ভুবনমোহিনীর কবিতার মধ্যে প্রয়াসজাত কবিতা নাই, প্রতিভাবর চিরজীবন্ত নির্ঝরিণী হইতে উৎসারিত, তথাপি যদি ভুবনমোহিনীকে মন হইতে স্থানান্তরিত করিয়া কবিতাগুলি পড়ি তবে কেমন লাগে বলিতে পারি না। আমার ইহার যাহাই পড়িতে যাই তাহাতেই ভুবনমোহিনীকে মনে পড়ে। গুন পাইলে অমনি ভুবনমোহিনীকে মনে পড়ে, অমনি সেই গুন দ্বিগুণিত হইয়া মনে উঠে। দোষ পাইলে অমনি ভুবনমোহিনীকে মনে পড়ে, অমনি তাহার চতুর্থাংশ কমিয়া যায়। যখন আমারা

রুধির মেখেছে, রুধির পিতেছে,

রুধির প্রবাহে দিতেছে সাঁতার

জিন্ন শীর্ষ শব, ভেসে যায় সব

পিশাচী প্রেতিনী কাতারে কাতার!

সস্বনে নিস্বনে মলয় পবন,

আহরি সুরভি নন্দনরতন

মন্দারসৌরভ অমৃতরাশি