স্যাক্‌সন জাতি ও অ্যাংলো স্যাক্‌সন সাহিত্য
প্রবেশ করিল। প্যারিসের খৃস্টান রাজকন্যা বাক্‌টার সহিত ইথ্‌ল্‌বার্টের বিবাহ হইল। রাঞ্চীর সহিত একজন খৃস্টান পুরোহিত কেন্টের রাজধানীতে আসিল। এই বিবাহ-বার্তা শ্রবণে সাহস পাইয়া পোপ গ্রেগরি সেন্ট অগস্টিনকে ইংলন্ডে খৃস্টান ধর্ম প্রচার করিতে পাঠাইয়া দিলেন। কেন্টের অধিপতি তাহাদের ধর্মোপদেশ শ্রবণ করিলেন ও কহিলেন ‘তোমাদের কথাগুলি বেশ, কিন্তু নূতন ও সন্দেহজনক।’ তিনি নিজে স্বধর্ম পরিত্যাগ করিতে চাহিলেন না, কিন্তু খৃস্টানদিগকে আশ্রয় দিতে স্বীকার করিলেন। প্রচলিত ধর্মের সহিত অনেক যুঝাযুঝির পর খৃস্টান ধর্ম ইংলন্ডে স্থান পাইল।

ইংলন্ড-বিজেতাদের যে সকলেরই এক ভাষা ও এক জাতি ছিল তাহা নহে। এই খৃস্টান ধর্ম প্রবেশ করিয়া তাহাদের ভাষা ও জাতি অনেকটা এক করিয়া দিল। এই ভাষার ঐক্য সাহিত্যের অল্প উন্নতির কারণ নহে। খৃস্টধর্ম প্রবেশ করিবার পূর্বে অক্ষরে লিখা প্রচলিত ছিল না। খৃস্টধর্ম প্রবেশ করিলে পর স্যাক্‌সনেরা নব উদ্যমে উদ্দীপ্ত হইল ও তাহাদের হৃদয়ের উৎস উন্মুক্ত হইয়া সংগীত-স্রোতে অ্যাংলো সাক্‌সন সাহিত্য পূর্ণ করিল। খৃস্টধর্ম প্রচার হওয়াতে স্যাক্‌সনদের মধ্যে রোমীয় সাহিত্য চর্চার আরম্ভ হইল ও বাইবেলের কবিতার উচ্চ আদর্শ স্যাক্‌সনেরা প্রাপ্ত হইল। যুদ্ধোন্মাদে মত্ত থাকিয়া যে জাতি বিদ্যার দিকে মনোযোগ করিতে পারে নাই, খৃস্টীয় ধর্মের সহিত শান্তি ও ঐক্যে অভিষিক্ত হইয়া সম্মুখে যে ইতালীয় বিদ্যার খনি পাইল তাহাতেই তাহারা মনের সমুদয় উদ্যম নিয়োগ করিল। খৃস্টধর্ম প্রচারের সহায়তা করিবার জন্য তাহারা অ্যাংলো স্যাক্‌সন ভাষায় বাইবেল ও অন্যান্য লাটিন ধর্মপুস্তক অনুবাদ করিতে লাগিল। ইহাতে যে ভাষার ও সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি হইবে তাহাতে আশ্চর্য কী? অ্যাংলো স্যাক্‌সন ভাষায় লিখিত অধিক প্রাচীন পুস্তক পাওয়া যায় না। অ্যালফ্রেডের সময়েই প্রকৃত প্রস্তাবে উক্ত ভাষা Bec ledene (Book language) অর্থাৎ লিখিত ভাষা হইল। প্রাচীনতর পুস্তক যাহা-কিছু পাওয়া যায়, তাহা খৃস্টান ধর্মপ্রচারের পরে অক্ষরে লিখিত হইয়াছে। প্রাচীনতম অ্যাংলো স্যাক্‌সন কাব্যের মধ্যে Lay of Beowulf পপ্রধান। ইহা কোন্‌ সময়ে যে রচিত হইয়াছিল তাহা নিশ্চিত বলা যায় না। অনেকে অনুমান করেন খৃস্টান ধর্ম প্রচলিত হইবার পূর্বে ইহা রচিত হইয়া থাকিবে। ইহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কবিতা অ্যাংলো স্যাক্‌সন ভাষায় পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু ইহার ধরন, ভাব অন্যান্য অ্যাংলো স্যাক্‌সন কবিতার সহিত এত বিভিন্ন যে, এই গীতি সাধারণ স্যাক্‌সন প্রতিভা হইতে উৎপন্ন বলিয়া মনে হয় না। স্কান্দিনেবীয় পৌরাণিক কবিতার সহিত ইহার অনেক সাদৃশ্য আছে। গল্পটির সারমর্ম এই, ডহাম গ্রেন্ডেল বলিয়া এক রাক্ষস ছিল, সে নিকটস্থ জলার মধ্য হইতে বাহির হইয়া রাত্রে গুপ্তভাবে তথাকার রাজবাটির মধ্যে প্রবেশ করিত ও গৃহস্থিত ঘুমন্ত যোদ্ধাদের বিনষ্ট করিত; কেহ কেহ বলেন এই রাক্ষস জলার অস্বাস্থ্যজনক বাষ্পের রূপক মাত্র। বোউল্‌ফ নৃপতি তথায় গিয়া সেই রাক্ষসকে আহত ও নিহত করেন। তিনি ফেনগ্রীব (Foamy necked) জাহাজে চড়িয়া কিরূপে বিদেশীয় রাজসভায় আইলেন এবং তাঁহার অন্যান্য কীর্তি ইহাতে স্কান্দিনেবীয় সাগার ধরনে লিখিত। বোউল্‌ফ এক মহাবীর পুরুষ। ‘তিনি উন্মুক্ত অসি দৃঢ় হস্তে ধরিয়া ঘোরতর তরঙ্গে ও শীতলতম ঝঞ্ঝায় সমুদ্র পর্যটন করিয়াছেন, ও তাঁহার চারি দিকে শীতের তীব্রতা সমুদ্রের ঊর্মির সহিত যুদ্ধ করিয়াছেন।’ কিন্তু তিনি তাহাদিগের কুঠারবিদ্ধ করিলেন। নয় জন সিন্ধুদৈত্য (NICOR) বিনাশ করিলেন। বৃদ্ধ রাজা হ্রথগার (Hrothgar)-কে গ্রেন্ডেল (Grendel) দৈত্যহস্ত হইতে নিস্তার করিবার জন্য অস্ত্রাদি কিছু না লইয়াই আসিলেন। আপনার শক্তির উপর নির্ভর করিয়া তিনি প্রাসাদে শুইয়া আছেন–‘নিশীথের অন্ধকার উত্থিত হইল, ওই গ্রেন্ডেল আসিতেছে, সকলে দ্বার খুলিয়া ফেলিল’–একজন ঘুমন্ত যোদ্ধাকে ধরিল, ‘তাহার অজ্ঞাতসারে তাহাকে ছিঁড়িয়া ফেলিল, তাহাকে দংশন করিল, তাহার শিরা হইতে রক্তপান করিল, ও তাহাকে ক্রমাগত ছিঁড়িয়া ছিঁড়িয়া খাইয়া ফেলিল।’ এমন সময়ে বোউল্‌ফ উঠিলেন, দৈত্যকে আক্রমণ করিলেন। ‘প্রাসাদ কম্পিত হইল... উভয়েই উন্মত্ত। গৃহ ধ্বনিত হইল, আশ্চর্য এই যে, যে মদ্যশালা এই সংগ্রামশ্বাপদদিগকে বহন করিয়া ছিল, সে সুন্দর প্রাসাদ ভাঙিয়া পড়ে নাই। শব্দ উত্থিত হইল, তাহা নূতন প্রকারের। যখন নর্থ