বাঙালি কবি নয় কেন?

কোলেতে লইতে বাড়ান কোল;

যেন অপরূপ নলিনী হেরিয়ে,

কাড়াকাড়ি করি করেন গোল।

তুমিই সে নীল নলিনী সুন্দরী,

সুরবালা সুর-ফুলের মালা;

জননীর হৃদিকমল-উপরি,

হেসে হেসে বেশ করিতে খেলা।

হরিণীর শিশু হরষিত মনে,

জননীর পানে যেমন চায়;

তুমিও তেমনি বিকচ নয়নে,

চাহিয়ে দেখিতে আপন মায়।

শ্যামল বরন, বিমল আকাশ;

হৃদয় তোমার অমরাবতী;

নয়নে কমলা করেন নিবাস,

আননে কোমলা ভারতী সতী।

কথা কহে দূরে দাঁড়ায়ে যখন,

সুরপুরে যেন বাঁশরি বাজে;

আলুথালু চুলে করে বিচরণ

মরি গো তখন কেমন সাজে!

মুখে বেশি হাসি আসে যে সময়

করতল তুলি আনন ঢাকে;

হাসির প্রবাহ মনে মনে বয়,

কেমন সরেস দাঁড়ায়ে থাকে!”

ইহাতে নিবিড় কেশভার, ঘন কৃষ্ণ আঁখিতারা, সুগোল মৃণাল ভুজ নাই তাই বোধ করি ইহার কবি বঙ্গীয় পাঠক সমাজে অপরিচিত, তাঁহার কাব্য অপঠিত। আন বিষ, মার ছুরি, ঢাল মদ–এমনতর একটা প্রকাণ্ড কাণ্ড না হইলে বাঙালিদের হৃদয়ে তাহার একটা ফলই হয় না। এক প্রকার প্রশান্ত বিষাদ, প্রশান্ত ভাবনা আছে, যাহার অত ফেনা নাই, অত কোলাহল নাই অথচ উহা অপেক্ষা ঢের গভীর তাহা বাংলা কবিতায় প্রকাশ হয় না। উন্মত্ত আস্ফালন, অসম্বদ্ধপ্রলাপ, “আর বাঁচি না, আর সহে না, আর পারি না” ভাবের ছট্‌ফটানি, ইহাই তো বাংলা কবিতার প্রাণ। এমন সফরী অপেক্ষা রোহিত মৎস্যের মূল্য অধিক। বাঙালির কল্পনা চোখে দেখিতে পায় না, বাঙালির কল্পনা বিষম স্থূল। তথাপি বাঙালি কবি বলিয়া বড়ো গর্ব করে।

আর-একটি কথা বলিয়া শেষ করি। যেখানে নানাপ্রকার কাজকর্ম হইতে থাকে, সেইখানেই মানুষের সকল প্রকার মনোবৃত্তি বিশেষরূপে বিকশিত হইতে থাকে। সেইখানে রাগ, দ্বেষ, হিংসা, আশা, উদ্যম, আবেগ, আগ্রহ প্রভৃতি মানুষের মনোবৃত্তিগুলি ফুটিতে থাকে। সেখানে মানুষের অত্যাকাঙ্ক্ষা উত্তেজিত হয়, (বাংলা ভাষায় ambition-এর একটা ভালো ও চলিত কথাই নাই) ও