মেঘনাদবধ কাব্য

–শুন সুকেশিনী,

বিবাদ না করি আমি কভু অকারণে।

অরি মম রক্ষঃপতি, তোমরা সকলে

কুলবালা, কুলবধূ; কোন্‌ অপরাধে

বৈরিভাব আচরিব তোমাদের সাথে?        ইত্যাদি।

তখন মনে করিলাম যে, রাম ভালোই করিয়াছেন, তিনি বীর, বীরের মর্যাদা বুঝেন; অবলা স্ত্রীলোকদের সহিত অনর্থক বিবাদ করিতেও তাঁহার ইচ্ছা নাই। তখন তো জানিতাম না যে, রাম ভয়ে যুদ্ধ করিতে সাহস করেন নাই।

দূতীর আকৃতি দেখি ডরিনু হৃদয়ে

রক্ষোবর! যুদ্ধসাধ ত্যজিনু তখনি।

মূঢ় যে ঘাঁটায় সখে হেন বাঘিনীরে।

এ রাম যে কী বলিয়া যুদ্ধ করিতে আসিয়াছেন সেই এক সমস্যা!

প্রমীলা তো লঙ্কায় চলিয়া যাউন, কিন্তু রামের যে ভয় হইয়াছে তাহা আর কহিবার নয়।

তিনি বিভীষণকে ডাকিয়া কহিতেছেন-

এবে কী করিব, কহো, রক্ষ-কুলমণি?

সিংহ সহ সিংহী আসি মিলিল বিপিনে,

কে রাখে এ মৃগ পালে?

রামের কাঁদো কাঁদো স্বর যেন আমরা স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছি। লক্ষ্মণ, দাদাকে একটু প্রবোধ দিলেন; রাম বিভীষণকে কহিলেন-

কৃপা করি, রক্ষোবর, লক্ষ্মণেরে লয়ে,

দুয়ারে দুয়ারে সখে, দেখো সেনাগণে।

কোথায় কে জাগে আজি? মহাক্লান্ত সবে

বীরবাহু সহ রণে।...

...এ পশ্চিম দ্বারে

আপনি জাগিব আমি ধনুর্বাণ হাতে!

লক্ষ্মণ ষষ্ঠ সর্গে রামকে কহিলেন-

মারি রাবণিরে, দেব, দেহো আজ্ঞা দাসে!

রঘুনাথ উত্তর করিলেন–

হায় রে কেমনে–

যে কৃতান্ত দূতে দূরে হেরি, ঊর্ধ্বশ্বাসে

ভয়াকুল জীবকুল ধায় বায়ুবেগে

প্রাণ লয়ে; দেব-নর ভস্ম যার বিষে;

কেমনে পাঠাই তোরে সে সর্প বিবরে,

প্রাণাধিক? নাহি কাজ সীতায় উদ্ধারি।

                                             ইত্যাদি