মেঘনাদবধ কাব্য

ইন্দ্রজিতের বধোপায় অবধারিত করিবার জন্য ইন্দ্র দুর্গার নিকট উপস্থিত হইলেন। ইন্দ্রের অনুরোধে পার্বতী শিবের নিকট গমনোদ্যত হইলেন। রতিকে আহ্বান করিতেই রতি উপস্থিত হইলেন, এবং রতির পরামর্শে মোহিনী মূর্তি ধরিতে প্রবৃত্ত হইলেন।

দুর্গা মদনকে আহ্বান করিলেন ও কহিলেন,

       চলো মোর সাথে,

হে মন্মথ, যাব আমি যথা যোগিপতি

যোগে মগ্ন হবে, বাছা; চলো ত্বরা করি।

‘বাছা’ কহিলেন-

কেমনে মন্দির হতে, নগেন্দ্রনন্দিনি,

বাহিরিবা, কহো দাসে, এ মোহিনী বেশে,

মুহূর্তে মাতিবে, মাতঃ, জগত হেরিলে,

ও রূপ মাধুরী সত্য কহিনু তোমারে।

হিতে বিপরীত, দেবী, সত্বরে ঘটিবে।

সুরাসুর-বৃন্দ যবে মথি জলনাথে,

লভিলা অমৃত, দুষ্ট দিতিসুত যত

বিবাদিল দেব সহ সুধা-মধু হেতু।

মোহিনী মুরতি ধরি আইলা শ্রীপতি।

ছদ্মবেশী হৃষিকেশে ত্রিভুবন হেরি।

হারাইলা জ্ঞান সবে এ দাসের শরে!

অধর-অমৃত-আশে ভুলিলা অমৃত

দেব দৈত্য; নাগদল নম্রশিরঃ লাজে,

হেরি পৃষ্ঠদেশে বেণী, মন্দর আপনি

অচল হইল হেরি উচ্চ কুচ যুগে!

স্মরিলে সে কথা, সতি, হাসি আসে মুখে,

মলম্বা অম্বরে তাম্র এত শোভা যদি

ধরে, দেবি, ভাবি দেখো বিশুদ্ধ কাঞ্চন

কান্তি কত মনোহর!

‘বাছা’র সহিত ‘মাতা’র কী চমৎকার মিষ্টালাপ হইতেছে দেখিয়াছেন? মলম্বা অম্বরের (গিলটি) উদাহরণ দিয়া, মদন কথাটি আরও কেমন রসময় করিয়া তুলিয়াছে দেখিয়াছেন? মহাদেবের নিকট পার্বতী গমন করিলেন,

মোহিত মোহিনী রূপে; কহিলা হরষে

পশুপতি, ‘কেন হেথা একাকিনী দেখি,

এ বিজন স্থলে তোমা, গণেন্দ্র জননি?

কোথায় মৃগেন্দ্র তব কিঙ্কর, শঙ্করি?