মেঘনাদবধ কাব্য

সৌর-খরতর-করজাল-সংকলিত-

আভাময় স্বর্ণাসনে বসি কুহকিনী শক্তিশ্বরী।

আমাদের মতে মায়াদেবীর আসন সৌর-খরতর-করজাল-সংকলিত না হইয়া যদি অস্ফুট অন্ধকারকেুজ্‌ঝটিকা-মণ্ডিত জলদময় হইত, তবে ভালো হইত। মায়াদেবীর নিকট হইতে দেব-অস্ত্র লইয়া ইন্দ্র রামসেমীপে প্রেরণ করিলেন।

পঞ্চম সর্গে ইন্দ্রজিতের ভাবনায় ইন্দ্রের ঘুম নাই;

–কুসুম শয্যা ত্যজি, মৌন-ভাবে

বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;-

সুবর্ণ মন্দিরে সুপ্ত আর দেব যত।

দেবতাদিগের ঘুমটা না থাকিলেই ভালো হইত, যদি বা ঘুম রহিল, তবে ইন্দ্রজিতের ভয়ে ইন্দ্রের রাতটা না জাগিলেই ভালো হইত।

শচী ইন্দ্রের ভয় ভাঙিবার জন্য নানাবিধ প্রবোধ দিতে লাগিলেন,

‘পাইয়াছ অস্ত্র কান্ত’, কহিলা পৌলমী

অনন্ত যৌবনা, ‘যাহে বধিলা তারকে

মহাসুর তারকারি; তব ভাগ্য বলে

তব পক্ষ বিরূপাক্ষ; আপনি পার্বতী,

দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ

হবে মনোরথ কালি; মায়া দেবীশ্বরী

বধের বিধান কহি দিবেন আপনি;-

তবে এ ভাবনা নাথ কহো কী কারণে?’

কিন্তু ইন্দ্র কিছুতেই প্রবোধ মানিবার নহেন, দেব-অস্ত্র পাইয়াছেন তাহা সত্য, শিব তাঁহার পক্ষ তাহাও সত্য, কিন্তু তথাপি ইন্দ্রের বিশ্বাস হইতেছে না-

       সত্য যা কহিলে,

দেবেন্দ্রাণি, প্রেরিয়াছি অস্ত্র লঙ্কাপুরে,

কিন্তু কী কৌশলে মায়া রক্ষিবে লক্ষ্মণে

রক্ষোযুদ্ধে, বিশালাক্ষি, না পারে বুঝিতে।

জানি আমি মহাবলী সুমিত্রা নন্দন;

কিন্তু দন্তী কবে, দেবি, আঁটে মৃগরাজে?

দম্ভোলী নির্ঘোষ আমি শুনি, সুবদনে;

মেঘের ঘর্ঘর ঘোর; দেখি ইরম্মদে,

বিমানে আমার সদা বাসে সৌদামিনী;

তবু থর-থরি হিয়া কাঁপে, দেবি,

যবে নাদে রুষি মেঘনাদ,

পাঠক দেখিলেন তো, ইন্দ্র কোনোমতে শচীর সান্ত্বনা মানিলেন না।