নর্ম্যান জাতি ও অ্যাংলো-নর্ম্যান সাহিত্য

সে কোমল বিছানায় শুইবি যখন

সোনার প্রদীপাধারে জ্বলিবেক আলো।

তবু যদি ঘুম তোর নাহি হয় বাছা

গায়কেরা গাবে গান সারারাত জেগে।

অসভ্য, মদ্যপানরত, কোলাহলপর, অপরিষ্কার, শিল্পজ্ঞানশূন্য স্যাক্সনদের সাহিত্যে এরূপ কবিতা নাই ও থাকিতে পারে না। স্যাক্সনদের আমোদের সহিত নর্ম্যানদের আমোদের অনেক প্রভেদ। নর্ম্যানদের আমোদের মধ্যে বিলাসের ভাব অধিকতর পরিস্ফুট। ব্রিটন-অধিপতি ভটিজরন যখন স্যাক্সন দলপতি হেঞ্জিস্টের শিবিরে নিমন্ত্রিত হইয়া হেঞ্জিস্টের পরম রূপবতী কন্যা রোয়ানকে দেখিলেন, একজন নর্ম্যান কবি তখনকার বর্ণনা করিতেছে-

হেঞ্জিস্ট করিল চেষ্টা প্রাণপণ করি

রাজা ও নাইটগণ সুখী হয় যাতে।

আমোদে উন্মত্ত হইল সকলে,

গৃহমধ্যে প্রবেশিলা রোয়েন সুন্দরী;

করে মদিরার পাত্র, সুচারুবসনা;

জানু পাতি বসিল সে রাজার সমুখে,

মদিরা করিল পান, চুম্বিলা রাজারে;

কেমন সুন্দর বপু, গৌর কান্তি তার,

কেমন সুন্দর ভূষা, নয়নরঞ্জন!

দেখিয়া উন্মত্ত হইল নৃপতির মন,

মদ্যপানে ভ্রংশ-বুদ্ধি, মাগিলা ভূপতি,

বিধর্মী সে রমণীরে বিবাহের তরে।

স্যাক্সনদের কঠোর লেখনী হইতে এরূপ মৃদু বিলাসময়ী কবিতা বাহির হইতে পারিত না।

কুমারী মেরীই মধ্যযুগের দেবতা ছিলেন। মহিলা-পূজার উৎকর্ষ তাঁহাতে গিয়াই পৌঁছিয়াছিল। প্রথমত তিনি খৃস্টের জননী ছিলেন, দ্বিতীয়ত সাধারণ মহিলাদের তিনিই পূর্ণ প্রতিমাস্বরূপ ছিলেন। তখনকার লোকের রমণী-ভক্তি হইতেই তাঁহার স্তব উত্থিত হইত। একটি মেরীর স্তব উদ্‌ধৃত করিতেছি-

দেবী, তব হোক জয়, স্বর্গীয় আনন্দময়,

        স্বর্গের মধুর পুষ্ট তুমি!

        মৃদুতার তুমি জন্ম-ভূমি!

দেবী, তব হোক জয়, উজ্জ্বল সৌন্দর্যময়!

        সব মম আশা তোমা-‘পরি,

        কিবা দিবা কিবা বিভাবরী!

     নক্ষত্রের রানী তুমি উজ্জ্বল বরন,

     দেখাও গো পথ মোরে দাও গো কিরণ,