প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
দেখা যাইতেছে, তোমরা স্বেচ্ছাপূর্ব্বক আমাদিগকে বৃহৎ অধিকার দিতে স্বীকার করিয়াছ, এবং কিছু কিছু দিয়াছ। কিন্তু তোমাদের প্রতিজ্ঞাপত্রের আশ্বাস-অনুসারিণী অধিকার প্রার্থনাকে তোমরা রাজভক্তির অভাব বলিয়া অত্যন্ত উষ্ণতা প্রকাশ কর। কিন্তু মনে মনে কি জান না ইহাতেই যথার্থ রাজভক্তি প্রকাশ পায়?
তোমাদের নিকট যাহা প্রার্থনা করিতেছি তাহা কোন বিজিত জাতি কোন জেতৃজাতির নিকট বিশ্বাসপূর্ব্বক প্রার্থনা করিতে পারিত না। ইহাই তোমাদের প্রতি যথার্থ ভক্তি, সেলাম করা বা জুতা খোলা নহে।
আমাদের মধ্যে কেহ কেহ মুখে যাহাই বলি, যখনি তোমাদের নিকট উন্নত অধিকার প্রত্যাশা করি তখনি তোমাদের মহৎ মনুষ্যত্বের প্রতি কি সুগভীর আন্তরিক ভক্তি প্রকাশ হইয়া পড়ে। তোমরা আপন রক্তপাত করিয়া ভারতবর্ষ অধিকার করিয়াছ এবং আপন প্রচণ্ড বলে এই আসমুদ্র আহিমাচল বিপুল ভারতভূমিকে করতলন্যস্ত আমলকের ন্যায় আয়ত্ত করিয়া রাখিয়াছ। আমাদের মনে এ আশা কোথা হইতে জন্মিল যে তোমাদের ঐ মহিমান্বিত রাজপ্রাসাদের উচ্চ সোপান আমাদের পক্ষে অনধিগম্য নহে? অবশ্যই তোমাদের খাপের মধ্য হইতে যেমন তরবারি মধ্যে মধ্যে মহেন্দ্রের বজ্রের ন্যায় আপন বিদ্যুৎ- আভা প্রকাশ করিয়াছে, তেমনি তোমাদের অন্তরের মধ্যে যে দীপ্ত মনুষ্যত্বের মহিমা বিরাজ করিতেছে তাহাও প্রবল শাসনের মধ্য হইতে মাভৈঃ শব্দে আপনাকে প্রকাশ করিয়াছে। নিম্নে ভূমিতলে দ্বারের নিকট যে প্রহরী বন্দুকের উপরে সঙ্গীন চড়াইয়া দাঁড়াইয়া থাকে তাহার অপ্রসন্ন মুখে নিষেধের ভাব দেখা যায়, কিন্তু যে জ্যোতিষ্মান পুরুষ প্রাসাদের শিখরদেশে দাঁড়াইয়া আছে সে আমাদিগকে অভয়দান করিয়া আহ্বান করিতেছে। ঐ দুর্ম্মুখ প্রহরীটাকে আমরা ভয় করি এবং মাঝে মাঝে সুযোগ পাইলেই তাহার শক্তিশেলের লক্ষ্য এড়াইয়া তাহার প্রতি নিষ্ফল কটুকাটব্যও প্রয়োগ করিয়া থাকি, কিন্তু সেই প্রসন্নমূর্ত্তি মহাপুরুষের মুখের দিকে আমরা আশান্বিত চিত্তে চাহিয়া আছি। ইহাকেই কি ভক্তির অভাব বলে!
এক ইংরাজ আমাদের প্রতি কট্মট্ করিয়া তাকায়। আর এক ইংরাজ উপর হইতে আপন মহত্ত্বের প্রতি আমাদিগকে আহ্বান করে। এই জন্য ভয়ের অপেক্ষা ভক্তিই প্রবল হয়। আশঙ্কার উপরে আশাই জয়লাভ করে। এবং আমাদের এই আশাই যথার্থ রাজভক্তি।
দুঃখের সহিত বলিতে বাধ্য হইতেছি, আমাদের মধ্যে ক্ষুদ্র এক দল আছেন ইংরাজবিদ্বেষ তাঁহাদের মনে এতই বলবান যে কন্গ্রেসের প্রতি কিছুতেই তাঁহারা প্রসন্নদৃষ্টিক্ষেপ করিতে পারেন না। তাঁহারা নীরবে রাজবিদ্বেষ জাগাইয়া রাখিতে চান, ইংরাজের নিকট উপকার প্রত্যাশা করে বলিয়াই তাঁহারা কন্গ্রেসের প্রতি বিমুখ। ইঁহাদের সহিত তুলনা করিয়া দেখিলেই কন্গ্রেসের যথার্থ ভাব পরিস্ফুট হইয়া উঠিবে।
ইঁহারা বলেন ইংরাজ কি তেমনি পাত্র! এত কাল যাহারা তোমাদিগকে কথায় ভুলাইয়া আসিয়াছে তাহারা কি আজ তোমাদের কথায় ভুলিবে! তোমরা এ বিদ্যা কত দিনই বা শিখিয়াছ! উহাদের কথার সহিত কাজের মিল করাইবার জন্য দাবি করিয়া বসিলে লাভে হইতে ফল হইবে এই যে, মিষ্ট কথাটুকু হইতেও বঞ্চিত হইবে। তাহার প্রমাণ হাতে হাতে দেখো। যে অবধি তোমরা উক্ত দেশহিতকর কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছ সেই অবধি পায়োনিয়র-প্রমুখ দেশের ইংরাজি কাগজ খৃষ্টানজনোচিত ভাব সম্পূর্ণ পরিহার করিয়াছে। স্বয়ং বড়কর্ত্তা সালিস্বারি আর থাকিতে পারিলেন না, প্রকাশ্যে তোমাদের কালামুখের উপর মুখনাড়া দিলেন। মিষ্টবাক্য মধুর-আশ্বাস এ- সকল সভ্যতার ভূষণ-এগুলোকে তোমরা এত বেশি খাঁটি বলিয়া ধরিয়া লইতেছ যে দায়ে ফেলিয়া অবশেষে ইংরাজের মধুর সভ্যতা এবং শোভন ভদ্রতাটুকুও তাড়াইবে। একদিন দেখিবে মিষ্টান্নও নাই, মিষ্ট বচনও নাই। দেখ-না কেন, কর্ত্তৃজাতীয়দের