প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
৪৯
অবশেষে তিনি কুব্লেই খাঁর সম্মুখে আহূত হইলে কুব্লেই খাঁ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি চাও কী?” তিনি উত্তর দিলেন, “শ্রীল শ্রীযুক্ত সুং সম্রাটের অনুগ্রহে আমি তাঁহার মন্ত্রী হইয়াছিলাম। আমি দুই প্রভুর সেবা করিতে পারিব না; আমি কেবল মৃত্যু ভিক্ষা করি।” তদনুসারে তাঁহার প্রাণদণ্ড হইল। পুরাতন রাজধানীর অভিমুখে নমস্কার করিয়া তিনি অবিচলিত-ভাবে মৃত্যুকে গ্রহণ করিলেন। তাঁহার শেষ কথা–”আমার কাজ সমাপ্ত হইয়াছে।”
৫০
জ্বরে শরীর যে পরিমাণ জল চায়, এমন আর কখনও চায় না। ইহার অনেক কারণ আছে। একটা আংশিক কারণ এই যে, ঘামের দ্বারা অনেক বেশি ক্ষয় হইতে থাকে বলিয়া অনেক বেশি জলের দরকার হয়; আর একটি কারণ এই যে, জ্বরে শরীর বিষাক্ত হইতে থাকে এবং জল সেই বিষকে পাতলা করিয়া দেয়। সুরাসার পান করার পরে জল পান করিবার প্রয়োজন ঠিক অনুরূপ কারণেই ঘটিয়া থাকে। জ্বরে জিহ্বা মুখ এবং কণ্ঠ শুকাইয়া যায়; তাহার কারণ এই যে, বিষ যেখানে মর্ম্মস্থানগুলিকে আক্রমণ করে সেখানে তাহাকে গুলিয়া পাতলা করার জন্য প্রাপ্তিযোগ্য সমস্ত জলের প্রয়োজন ঘটে। জ্বরের সময়ে রোগী জল চায়, তাহার আর একটা কারণ এই যে, তখন সে গরম হইয়া উঠে এবং ঠাণ্ডা জলের সংযোগে তাহার দেহতাপ কমিয়া যায়। ভিতরে যে বিষ আছে জল কেবল যে তাহাকে পাতলা করে তাহা নহে, তাহা দূর করিয়াও দেয়।
৫১
এইরূপ কথিত আছে যে, ফ্রান্সে প্রথম পারস্যদেশীয় দৌত্য প্রেরিত হয়, তখন একদিন বয়সের এবং রূপবত্তার নানা অবস্থায় বিরাজিত ফরাসী মহিলাবৃন্দ-দ্বারা তাঁহার ঘর পূর্ণ দেখিয়া, রাজদূত আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া যান। ইহার অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহাকে বলা হইল যে, অজ্ঞাতপ্রায় দেশের প্রতিনিধিকে দেখিবার জন্য কৌতূহলী হইয়া তাঁহারা আসিয়াছেন। আরও এরূপ গল্প শুনা যায় যে মহামান্য মন্ত্রী তাঁহাদের কাহারও সহিত কথা বলিলেন না, তাঁহাদের প্রত্যেককে দেখিয়া দেখিয়া ঘরের চারি দিকে বেড়াইতে লাগিলেন ও তাঁহার সহচর দোভাষীর নিকটে মন্তব্য প্রকাশ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। একটি বর্ষীয়সী ও অতিভূষিতা মহিলা নিজেকে অতিপ্রকট করিয়াছিলেন; তিনি দোভাষীকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, মন্ত্রী কী বলিলেন। তিনি উত্তর দিলেন, “মহামাননীয় কেবল আপনাদের কাহার সৌন্দর্য্যের কত মূল্য, তাহাই নির্দ্ধারণ করিয়া দিলেন।” সেই মহিলা একজনকে নির্দ্দেশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভালো, ঐ যুবতীর সম্বন্ধে তিনি কী বলিলেন?”
৫২
মন্ত্রী বলিলেন, “উনি পাঁচ হাজার ক্রাউনের যোগ্য।”
আর একজনকে দেখাইয়া মহিলাটি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর ইনি?”
“দুই হাজার।”
“আর ঐ যে উনি?”
মন্ত্রী বলিলেন, “উঁহার জন্য তিনি আটশত ক্রাউন দিতে পারেন।”
“আর আমার সম্বন্ধে তিনি কী বলিলেন?”–দোভাষী ইতস্তত করিতে লাগিলেন, কিন্তু উত্তর দিবার জন্য পীড়াপীড়ি করাতে বলিলেন যে, তিনি কিছু বলিতে পারেন না। সেই মহিলা জেদ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “কিন্তু আমি জানি যে তিনি কিছু বলিয়াছেন।” দোভাষী অবশেষে হয়রান হইয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিলেন, “সত্য কথা বলিতে কী, মহামান্য মন্ত্রী আপনার নিকটে যখন আসিলেন তখন বলিলেন যে, এ দেশের আধপয়সা পাইপয়সা প্রভৃতি তাঁহার জানা নাই।”