প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বসন্ত মলয়ানিল, রজনীগন্ধা কোকিল,
দুরন্ত টগর সুধাকর –
মলয়ানিল বসন্ত, রজনীগন্ধা দুরন্ত,
সুধাকর কোকিল টগর।
ও চারি দিক হইতে “আহা আহা” পড়িয়া যাইত, কারণ কথাগুলি ঠিক নিয়মানুসারে বসানো হইয়াছে – তাহা হইলে কবিতা কতকটা আধুনিক গানের মত হইত। ঐ কয়েকটি কথা ব্যতীত আর-একটি কথা যদি বিদ্যাপতি বসাইতে চেষ্টা করিতেন, তাহা হইলে কবিতাপ্রিয় ব্যক্তিগণ “ধিক্ ধিক্” করিতেন ও তাঁহার কবিতার নাম হইত “কবিতা জংলা বসন্ত।” এরূপ হইলে আমাদের কবিতার কি দ্রুত উন্নতিই হইত! কবিতার ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিণী বাহির হইত, বিদেশবিদ্বেষী জাতীয়ভাবোন্মত্ত আর্যপুরুষগণ গর্ব করিয়া বলিতেন, উঃ, আমাদের কবিতায় কতগুলা রাগ-রাগিণী আছে, আর অসভ্য ম্লেচ্ছদের কবিতায় রাগ রাগিণীর লেশ মাত্র নাই।
আমরা যেমন আজ কাল নবরসের মধ্যেই মারামারি করিয়া কবিতাকে বন্ধ করিয়া রাখি না, অলংকারশাস্ত্রোক্ত আড়ম্বরপূর্ণ নামের প্রতি দৃষ্টি করি না– তেমনি সংগীতে কতকগুলা নাম ও নিয়মের মধ্যেই যেন বদ্ধ হইয়া না থাকি। কবিতারও যে স্বাধীনতা আছে সংগীতেরও সেই স্বাধীনতা হউক, কারণ সংগীত কবিতার ভাই। যেমন সন্ধ্যার বিষয়ে কবিতা রচনা করিতে গেলে কবি সন্ধ্যার ভাব কল্পনা করিতে থাকেন ও তাঁহার প্রতি কথায় সন্ধ্যা মূর্তিমতী হইয়া উঠে, তেমনি সন্ধ্যার বিষয়ে গান রচনা করিতে গেলে রচয়িতা যেন চোখ কান বুজিয়া পুরবী না গাহিয়া যান, যেন সন্ধ্যার ভাব কল্পনা করেন, তাহা হইলে অবসান দিবসের ন্যায় তাঁহার সুরও আপনা-আপনি নামিয়া আসিবে, মুদিয়া আসিবে, ফুরাইয়া আসিবে। প্রত্যেক গীতিকবিদের রচনায় গানের নূতন রাজ্য আবিষ্কার হইতে থাকিবে। তাহা হইলে গানের বাল্মীকি গানের কালিদাস জন্মগ্রহণ করিবেন।