প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
লুব্ধা মন্দা কহিল, “পাস যদি আমার জন্যে আনিস।”
চারু হাসিল, অমল হাসিল। তাহাদের সংকল্পগুলির প্রধান সুখ এবং গৌরব এই ছিল যে, সেগুলি তাহাদের দুজনের মধ্যেই আবদ্ধ। মন্দার আর যা-কিছু গুণ থাক্, কল্পনা ছিল না; সে এ-সকল প্রস্তাবের রস গ্রহণ করিবে কী করিয়া। সে এই দুই সভ্যের সকলপ্রকার কমিটি হইতে একেবারে বর্জিত।
অসাধ্য বাগানের এস্টিমেটও কমিল না, কল্পনাও কোনো অংশে হার মানিতে চাহিল না। সুতরাং আমড়াতলার কমিটি এইভাবেই কিছুদিন চলিল। বাগানের যেখানে ঝিল হইবে, যেখানে হরিণের ঘর হইবে, যেখানে পাথরের বেদী হইবে, অমল সেখানে চিহ্ন কাটিয়া রাখিল।
তাহাদের সংকল্পিত বাগানে এই আমড়াতলার চার দিক কী ভাবে বাঁধাইতে হইবে, অমল একটি ছোটো কোদাল লইয়া তাহারই দাগ কাটিতেছিল–– এমন সময় চারু গাছের ছায়ায় বসিয়া বলিল, “অমল, তুমি যদি লিখতে পারতে তা হলে বেশ হত।”
অমল জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বেশ হত।”
চারু। তা হলে আমাদের এই বাগানের বর্ণনা করে তোমাকে দিয়ে একটা গল্প লেখাতুম। এই ঝিল, এই হরিণের ঘর, এই আমড়াতলা, সমস্তই তাতে থাকত—আমরা দুজনে ছাড়া কেউ বুঝতে পারত না, বেশ মজা হত। অমল, তুমি একবার লেখবার চেষ্টা করে দেখো-না, নিশ্চয় তুমি পারবে।
অমল কহিল, “আচ্ছা, যদি লিখতে পারি তো আমাকে কী দেবে।”
চারু কহিল, “তুমি কী চাও।”
অমল কহিল, “আমার মশারির চালে আমি নিজে লতা এঁকে দেব, সেইটে তোমাকে আগাগোড়া রেশম দিয়ে কাজ করে দিতে হবে।”
চারু কহিল, “তোমার সমস্ত বাড়াবাড়ি। মশারির চালে আবার কাজ! ”
মশারি জিনিসটাকে একটা শ্রীহীন কারাগারের মতো করিয়া রাখার বিরুদ্ধে অমল অনেক কথা বলিল। সে কহিল, সংসারের পনেরো-আনা লোকের যে সৌন্দর্যবোধ নাই এবং কুশ্রীতা তাহাদের কাছে কিছুমাত্র পীড়াকর নহে ইহাই তাহার প্রমাণ।
চারু সে কথা তৎক্ষণাৎ মনে মনে মানিয়া লইল এবং ‘আমাদের এই দুটি লোকের নিভৃত কমিটি যে সেই পনেরো-আনার অস্তর্গত নহে’ ইহা মনে করিয়া সে খুশি হইল।
কহিল, “আচ্ছা বেশ, আমি মশারির চাল তৈরি করে দেব, তুমি লেখো।”
অমল রহস্যপূর্ণভাবে কহিল, “তুমি মনে কর, আমি লিখতে পারি নে? ”
চারু অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া কহিল, “তবে নিশ্চয় তুমি কিছু লিখেছ, আমাকে দেখাও।”
অমল। আজ থাক্, বউঠান।
চারু। না, আজই দেখাতে হবে–– মাথা খাও, তোমার লেখা নিয়ে এসো গে।
চারুকে তাহার লেখা শোনাইবার অতিব্যগ্রতাতেই অমলকে এতদিন বাধা দিতেছিল। পাছে চারু না বোঝে, পাছে তার ভালো না লাগে, এ সংকোচ সে তাড়াইতে পারিতেছিল না।
আজ খাতা আনিয়া একটুখানি লাল হইয়া, একটুখানি কাশিয়া, পড়িতে আরম্ভ করিল। চারু গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়া ঘাসের উপর পা ছড়াইয়া শুনিতে লাগিল।
প্রবন্ধের বিষয়টা ছিল ‘আমার খাতা’। অমল লিখিয়াছিল–– ‘হে আমার শু খাতা, আমার কল্পনা এখনো তোমাকে স্পর্শ