গীতালি
ভাঁজছেনই, গলা সাধছেন তো সাধছেনই, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হয়তো বর্ষাকাল–মেঘলা হয়েছে–আমার তখন একটু কবিত্ব [জাগল]। তবু যা শুনতাম হয়তো মনে থাকত।
[এইখানে রবীন্দ্রনাথ একটি গান করেন]

খুব মনে পড়ে এই গান যেদিন শিখি। বড়দাদা সেজদাদারা দরজা বন্ধ করে গান শিখতেন। ছেলেমানুষ, আমার তথায় প্রবেশ ছিল না। কারণ, তখনকার দিনে ছেলেমানুষের অনেক অপরাধ ছিল। তানপুরার কান কখনো মুড়ি নি। তবু দরজার পাশে কান দিয়ে শুনেছি, সেটা হয়তো মনে রয়ে গেল। এমনি করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যা শিখেছি তাই তোমাদের কাছে আওড়ালাম। তোমাদের যা দিয়েছি, এই ছুঁয়ে ছুঁয়ে যা শিখেছি তাই দিয়েছি।

আমার গান যাতে আমার গান ব’লে মনে হয় এইটি তোমরা কোরো। আরো হাজারো গান হয়তো আছে-তাদের মাটি করে দাও-না, আমার দুঃখ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে আমার মিনতি–তোমাদের গান যেন আমার গানের কাছাকাছি হয়, যেন শুনে আমিও আমার গান বলে চিনতে পারি। এখন এমন হয় যে, আমার গান শুনে নিজের গান কিনা বুঝতে পারি না। মনে হয় কথাটা যেন আমার, সুরটা যেন নয়। নিজে রচনা করলুম, পরের মুখে নষ্ট হচ্ছে, এ যেন অসহ্য। মেয়েকে অপাত্রে দিলে যেমন সব-কিছু সইতে হয়, এও যেন আমার পক্ষে সেই রকম।

বুলাবাবু, তোমার কাছে সানুনয় অনুরোধ–এঁদের একটু দরদ দিয়ে, একটু রস দিয়ে গান শিখিয়ো-এইটেই আমার গানের বিশেষত্ব। তার উপরে তোমরা যদি স্টিম রোলার চালিয়ে দাও, আমার গান চেপ্টা হয়ে যাবে। আমার গানে যাতে একটু রস থাকে, তান থাকে, দরদ থাকে ও মীড় থাকে, তার চেষ্টা তুমি কোরো।