গ্রন্থসমালোচনা
আলাপ আছে,তাহা আমাদের অত্যন্ত প্রীতিকর বোধ হইয়াছে, এবং রোহিণীও আমাদের প্রিয় সখী হইয়া পড়িয়াছেন। স্বপ্ন ও তদীয় সঙ্গিনীগণের গানে আমরা মুগ্ধ হইয়াছি। তবে দোষ দেখাইয়া দেওয়া সমালোচকদের কর্তব্য ভাবিয়াই বলিতে হইল যে নাটকের রাক্ষস-রাক্ষসীদের কথাগুলিতে বেণীসংহারের কথা আমাদের মনে পড়ে। কিন্তু তাহা মনে পড়িলেও আমরা এ কথা বলিতে সংকুচিত হইব না যে শ্রীযুক্ত গিরিশচন্দ্র একজন প্রকৃত কবি–একজন প্রকৃত ভাবুক। তাঁহার রাবণ-বধে যদিও রাম-লক্ষ্মণের প্রকৃতি বিশেষ রূপে পরিস্ফুট হয় নাই, তবুও তাঁহার রাবণ ও মন্দোদরী এমন জীবন্ত হইয়াছে, যে সেইজন্যই রাবণ-বধ নাটকখানি এত প্রীতিকর লাগে। রাবণের মহান বীরত্ব ও মন্দোদরীর কবিত্বময় তেজস্বিতা এত পরিস্ফুট রূপে রাবণ-বধ নাটকে প্রতিফলিত হইয়াছে যে তাহার উপরে আমাদের একটি কথা কহিবার আবশ্যক নাই। বিশেষত দেবী আরাধনা ও দেবী স্তোত্রগুলি অতি সুন্দর হইয়াছে। কেবল মৃত্যুবাণ আনয়ন ঘটনাটি ও সেই স্থানের বর্ণনাটি আমাদের বড়ো মনঃপুত হয় নাই। আমরা শ্রীযুক্ত গিরিশচন্দ্রের নূতন ধরনের অমিত্রাক্ষর ছন্দের বিশেষ পক্ষপাতী। ইহাই যথার্থ অমিত্রাক্ষর ছন্দ। ইহাতে ছন্দের পূর্ণ স্বাধীনতা ও ছন্দের মিষ্টতা উভয়ই রক্ষিত হইয়াছে। কি মিত্রাক্ষরে কি অমিত্রাক্ষরে অলংকারশাস্ত্রোক্ত ছন্দ না থাকিয়া হৃদয়ের ছন্দ প্রচলিত হয়, ইহাই আমাদের একান্ত বাসনা ও ইহাই আমরা করিতে চেষ্টা করিয়া আসিতেছি। গিরিশবাবু এ বিষয়ে আমাদের সাহায্য করাতে আমরা অতিশয় সুখী হইলাম।

অভিমন্যু সম্ভব কাব্য। শ্রীপ্রসাদ দাস গোস্বামী কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত। ইডেন্‌ প্রেস, মূল্য ছয় আনা মাত্র।
এই অমিত্রাক্ষর ছন্দের কাব্যখানি সুন্দর ও প্রাঞ্জল হইয়াছে। কিন্তু গ্রন্থকারের কল্পনা সুকুমার কিশোর কল্পনা। স্থলে স্থলে তাহার পদস্খলন হয়। সর্বত্রই সমভাবে তাঁহার বলিষ্ঠ স্ফূর্তি দেখা যায় না। ভাষাও সকল স্থানে সহজ স্রোতোবাহী হয় নাই। তথাপি আমরা কাব্যখানি পাঠ করিয়া প্রীত হইয়াছি।

The Indian Homoeopathic Review. Edited by B. L. Bhaduri.

এখানি আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাসিক পত্র। কবিরাজী বা হাকিমী, অ্যালোপ্যাথি বা হোমিওপ্যাথি, কোন্‌ প্রথাটা যে আমাদের উপকারী–সে বিষয় লইয়া তর্ক করিতে আমরা এখন চাহি না–চাহিলেও সিদ্ধান্তে আসিতে আমরা পারগ কি না, তাহাও বলিতে পারি না। তবে এই মাত্র বলিতে পারি, যে এরূপ সাময়িক পত্রে আমাদের উপকার ব্যতীত অপকারের সম্ভাবনা নাই। কিন্তু জিজ্ঞাস্য এই–এই পত্র আংশিক ভাবে বাংলা ভাষায় না হইয়া সমস্তটাই বাংলা ভাষায় প্রচারিত হইল না কেন?–কাহাদের জন্য এ পত্র প্রকাশিত হইতেছে?–যদি বাঙালিদের জন্য হয় তবে তাহা বাংলা ভাষাতেই প্রচারিত হওয়া উচিত। আর যদি ইংরাজদের জন্য হয়, তবে ইহা প্রকাশ করিবার আবশ্যক নাই। তবে এই আধা-ইংরাজী আধা-বাঙালি পত্র–এই “ইঙ্গ-বঙ্গ” মাসিক পত্রের উদ্দেশ্য কী?

এই-সকল কথা মহোদয় সম্পাদকের ভাবা উচিত ছিল। আমরা স্বীকার করি যে সম্পাদকীয় কার্য সুন্দররূপে সম্পাদিত হইয়াছে। শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্রের সরল ও সহজ বাংলাতে যে প্রবন্ধগুলি লিখিত হইয়াছে তাহার আমরা সুখ্যাতি করি, কিন্তু এই পত্রিকাতে আরও বিস্তর লোকের লেখা আছে। M. M. Bose. M. D. L. R. C. P. একজন উক্ত পত্রিকার লেখক। তিনি ইংলণ্ড ও আমেরিকায় শিক্ষা লাভ করিয়াও লিখিতেছেন যে “May we hope that our educated countrymen of the locality will come forward to help the commission with informations as respects to drinking water &c.” তিনি আরও লিখিতেছেন “We would like to call the attention of manager &c to the teaching of elimentary knowledge of Animal Physiology &c.” যদিও আমরা স্বীকার করি, বাঙালির ইংরাজীতে ভুল থাকাই সম্ভব, তথাপি যেমন করিয়া হউক ইংরাজি যে লিখিতেই হইবে তাহার আমরা কোনো আবশ্যক দেখি না। তবুও যাহা হউক লেখকের উন্নত উদ্দেশ্য দেখিয়া তাঁহার ইংরাজি লেখা মার্জনা করা যায়। আমরা এই অত্যাবশ্যক পত্রটির উন্নতি কামনা করি।