‘প্রাচীন-কাব্য সংগ্রহ’
অসংগত, তাহা মনোযোগ করিয়া দেখিলেই প্রতীতি হইবে-

লীলা-কমলে ভ্রমরা কিয়ে বারি।

চমকি চললু ধনি চকিতে নেহারি॥

‘লীলা-কমল’ ও ‘চকিতে নেহারি’ এতদূর; এবং মাঝে ‘চমকি চললু ধনি’ এমন একটা ব্যবধান স্বরূপে পড়িয়াছে যে উহাকে একত্র করিতে গেলে অনেক টানাটানি করিতে হয় ও ‘ন্যায়’ নামক একটা যোজক পদার্থ ঘর হইতে তৈরি করিয়া আনিতে হয়। আমরা যে অর্থ দিয়াছি তাহা ইহা অপেক্ষা সহজ। ‘বারি’ শব্দের অর্থ নিবারণ করা অপ্রচলিত নহে। যথা-

‘পুর-রমণীগণ রাখল বারি।’ সং ১২৩, পৃ. ১০৩

অর্থাৎ পুর-রমণীগণ নিবারণ করিয়া রাখিল।

১১-সংখ্যক গীতে সম্পাদক,

‘একে তনু গোরা, কনক-কটোরা

অতনু, কাঁচলা-উপাম।’ পৃ. ১৩

এই দুই চরণের অর্থ করিতে পারেন নাই। তিনি কহিয়াছেন, ‘এই চরণের অর্থগ্রহ হইল না।’ আমরা ইহার এইরূপ অর্থ করি—‘তনু গৌরবর্ণ; কনক কটোরা (অর্থাৎ স্তন) অতনু অর্থাৎ বৃহৎ, এবং কাঁচলা-উপাম, অর্থাৎ ঠিক কাঁচলির মাপে।’

যব গোধূলি সময় বেলি,

ধনি মন্দির বাহির ভেলি,

নব জলধরে বিজুরি-রেখা দ্বন্দ্ব পসারিয়া গেলি॥ সং ১৬, পৃ. ১৭

সম্পাদক টীকা করিতেছেন : ‘বিদ্যুৎ রেখার সহিত দ্বন্দ্ব (বিবাদ) বিস্তার করিয়া গেল। অর্থাৎ তাহার সমান বা অধিক লাবণ্যময়ী হইল।’ ‘সহিত’ শব্দটি সম্পাদক কোথা হইতে সংগ্রহ করিলেন? ইহার সহজ অর্থ এই—রাধা গোধূলির ঈষৎ অন্ধকারে মন্দিরের বাহির হইলেন; যেন নব জলধরে বিদ্যুৎ রেখা দ্বন্দ্ব বিস্তার করিয়া গেল।’ ইহাই ব্যাকরণশুদ্ধ ও সুভাব-সংগত অর্থ।

সম্পাদক ২০-সংখ্যক গীতের কোনো অর্থ দেন নাই। আমাদের মতে তাহার ব্যাখ্যা আবশ্যক। সে গীতটি এই—

এ সখি কি পেখনু এক অপরূপ।

শুনইতে মানবে স্বপন স্বরূপ॥

কমল যুগলপর চাঁদকি মাল।

তাপর উপজল তরুণ তমাল॥

তাপর বেড়ল বিজুরী লতা।

কালিন্দী তীর ধীর চলি যাতা॥

শাখাশিখর সুধাকর পাঁতি।

তাহে নব পল্লব অরুণক ভাতি॥

বিমল বিম্বফল যুগল বিকাশ।

তাপর কির থির করু বাস॥

তাপর চঞ্চল খঞ্জন যোড়।

তাপর সাপিনী ঝাঁপল মোড়॥ পৃ. ২১