প্রতিশব্দ
সেগুলি যদি সশ্রম কারাদণ্ডে ব্যবহার করতে দিতে তা হলে তিন-চার মাসের মেয়াদ ভর্তি হতে পারত।

Intellectual friendship শব্দের ভাষান্তরে তোমাদের প্রস্তাব ‘আধিমানসিক মিত্রতাবোধ’। আপত্তি এই, মিত্রতা মানসিক হবে না তো আর কি হতে পারে? মানসিক শব্দের অর্থ intellectual-এর চেয়ে ব্যাপক-বস্তুত ওর ইংরেজী হচ্ছে mental। Intellect-কে বুদ্ধি বল্‌লে বোঝা সহজ হয় বুদ্ধিগত বা বুদ্ধিমূলক বা বুদ্ধিপ্রধান মৈত্রী অথবা মৈত্রীবোধ বল্‌লে কানে খটকা লাগবে না। ওর প্রতিকূল হচ্ছে emotional অর্থাৎ ভাবপ্রধান বা হৃদয়প্রধান।

Cultural self শব্দটাকে তর্জমা করা আরো দুঃসাধ্য। তোমাদের প্রস্তাব হচ্ছে ‘আধি সাংস্কৃতিক’। এর ঠিক মানেটা আন্দাজ করা অসম্ভব বললেই হয়। প্রথমত culture শব্দের বাংলা একটি করতে হবে। আমি বলি মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্রপ্রকর্ষ বল্‌লে ভাবখানার একটা ইসারা পাওয়া যায়। cultured লোককে বলা যেতে পারে প্রকৃষ্টচিত্ত বা প্রকৃষ্টমনা। যদি বলতে হয় অঙ্কশাস্ত্রে তিনি cultured তা-হলে বাংলায় বলবে অঙ্কশাস্ত্রে তিনি প্রকর্ষপ্রাপ্ত। অমুক পরিবারে culture-এর atmosphere আছে বলতে হলে বলা যেতে পারে, অমুক পরিবারে মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্তপ্রকর্ষের আবহাওয়া আছে। কৃষ্টি কথাটা আমার কানে একটুও ভালো লাগে না। বরঞ্চ উৎকৃষ্টি১ বল্‌লেও কোনোমতে চলত।

যা হোক আমার মতে cultural self-কে চিত্তপ্রকর্ষগত বা মনঃপ্রকর্ষগত সত্তা বা ব্যক্তিত্ব বলা যায়। আরো দুটো কথা দিয়েছ intellectual passion, intellectual self। সংরাগ শব্দকে আমি passion অর্থে ব্যবহার করি। অতএব আমার মতে intellectual passion -কে বুদ্ধিগত সংরাগ ও intellectual self-কে বুদ্ধিগত ব্যক্তিত্ব বল্‌লে ভাবটা বুঝতে বাধবে না। যাই হোক বহুল ব্যবহার ছাড়া এ-সব শব্দ ভাষায় প্রাণবান হয়ে ওঠে না। বলা বাহুল্য physical culture-কে বলতে হবে দেহপ্রকর্ষ চর্চা।২

১৫

ভূতত্ত্বের পরিভাষা আলোচনা আমার পক্ষে অসাধ্য। Fossil শব্দকে শিলক ও Fossilized—কে শিলীকৃত বলা চলে। Sub-man-কে অবমানব বললেই ভালো হয়। প্রাতর্‌ ও প্রত্যুষ শব্দের যোগে যে শব্দ বানিয়েছ কানে অসংগত ঠেকে। প্রাতর্‌ শব্দের পরিবর্তে প্রথম বা প্রাক্‌ ব্যবহার করলে চলে না কি, Eolith =প্রাক্‌প্রস্তর। Eoanthropus=প্রাক্‌মানব। Eocene=প্রাগাধুনিক।

Proterozoic=পরাজৈবিক।৩

১৬

পরিভাষা সংকলনের কাজ আপনি যে নিয়মে চালাচ্ছেন সে আমার অনুমোদিত। আপনার কাজ শেষ হতে দীর্ঘকাল লাগবে। কিন্তু বাংলা ভাষার বৈজ্ঞানিক পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজে অধিক দেরি করা চলবে না। বই যাঁরা লিখ্‌বেন তাঁদের মধ্যে যোগ্যতম


১ দ্রষ্টব্য : ‘কালচার ও সংস্কৃতি’

২সুধীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিকিত পত্র

৩ সতীশরঞ্জন খাস্তগীরকে লিখিত পত্র