অরূপরতন
সুদর্শনার প্রবেশ

সুদর্শনা। এ কী হল? ঘুরে ফিরে সেই একই জায়গায় এসে পড়ছি। ঐ যে গোলমাল শোনা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার চারি দিকেই যুদ্ধ চলছে। ঐ যে আকাশ ধুলোয় অন্ধকার। আমি কি এই ঘূর্ণি ধুলোর সঙ্গে সঙ্গেই অনন্তকাল ঘুরে বেড়াব? এর থেকে বেরোই কেমন করে?

সুরঙ্গমা। তুমি যে কেবল চলে যেতেই চাচ্ছ, ফিরতে চাচ্ছ না,সেই জন্য কোথাও পৌঁছোতে পাচ্ছ না।

সুদর্শনা। কোথায় ফেরবার কথা তুই বলছিস?

সুরঙ্গমা। আমাদের রাজার কাছে। আমি বলে রাখছি, যে-পথ তাঁর কাছে না নিয়ে যাবে সে-পথের অন্ত পাবে না কোথাও।


সৈনিকের প্রবেশ

সুদর্শনা। কে তুমি?

সৈনিক। আমি নগরের রাজপ্রাসাদের দ্বারী।

সুদর্শনা। শীঘ্র বলো সেখানকার খবর কী।

সৈনিক। মহারাজ বন্দী হয়েছেন।

সুদর্শনা। কে বন্দী হয়েছেন?

সৈনিক। আপনার পিতা।

সুদর্শনা। আমার পিতা! কার বন্দী হয়েছেন?

সৈনিক। রাজা বিক্রমবাহুর।

[সৈনিকের প্রস্থান

সুদর্শনা। রাজা, রাজা, দুঃখ তো আমি সইতে প্রস্তুত হয়েই বেরিয়েছিলেম, কিন্তু আমার দুঃখ চারদিকে ছড়িয়ে দিলে কেন? যে আগুন আমার বাগানে লেগেছিল সেই আগুন কি আমি সঙ্গে করে নিয়ে চলেছি। আমার পিতা তোমার কাছে কী দোষ করেছেন?

সুরঙ্গমা। আমরা যে কেউ একলা নই। ভালোমন্দ সবাইকেই ভাগ করে নিতে হয়। সেইজন্যেই তো ভয়, একলার জন্যে ভয় কিসের?

সুদর্শনা। সুরঙ্গমা!

সুরঙ্গমা। কী রাজকুমারী!

সুদর্শনা। তোর রাজার যদি রক্ষা করবার শক্তি থাকত, তাহলে আজ তিনি কি নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারতেন?

সুরঙ্গমা। আমাকে কেন বলছ? আমার রাজার হয়ে উত্তর দেবার শক্তি কি আমার আছে? উত্তর যদি দেন তো নিজেই এমনি করে দেবেন যে কারও কিছু বুঝতে বাকি থাকবে না।

সুদর্শনা। রাজা, আমার পিতাকে রক্ষা করবার জন্যে যদি তুমি আসতে, তাহলে তোমার যশ বাড়ত বই কমত না।


[প্রস্থানোদ্যম

সুরঙ্গমা। কোথায় যাচ্ছ?

সুদর্শনা। রাজা বিক্রমের শিবিরে। আমাকে বন্দী করুন তিনি, আমার পিতাকে ছেড়ে দিন। আমি নিজেকে যতদূর নত করতে পারি করব, দেখি কোথায় এসে ঠেকলে তোর রাজার সিংহাসন নড়ে।

[উভয়ের প্রস্থান