নটীর পূজা

বাসবী। আর এখান থেকে তুমি অভিশাপের উষ্ণ নিশ্বাস ফেলবে। তাতে অশোকবনও দগ্ধ হবে না, শ্রীমতীর শান্তিও থাকবে অক্ষুণ্ন।


রত্নাবলী ও মল্লিকা ব্যতীত আর সকলের প্রস্থান

রত্নাবলী। সইবে না! সইবে না! এ একেবারে সমস্তর বিরুদ্ধ। মল্লিকা, পুরুষ হয়ে জন্মালুম না কেন! এই কঙ্কণপরা হাতের ’পরে ধিক্‌কার হয়। যদি থাকত তলোয়ার! তুমিও তো মল্লিকা সমস্তক্ষণ চুপ করে সে বসে ছিলে, একটি কথাও কও নি। তুমিও কি ওই নটীর পরিচারিকার পদ কামনা কর?

মল্লিকা। করলেও পাব না। নটী আমাকে খুব চেনে।

রত্নাবলী। চুপ করে সহ্য করে কী করে বুঝতে পারিনে। ধৈর্য নিরুপায় ইতর লোকের অস্ত্র, রাজার মেয়েদের না।

মল্লিকা। আমি জানি প্রতিকার আসন্ন, তাই শক্তির অপব্যায় করি নে।

রত্নাবলী। নিশ্চিত জান?

মল্লিকা। নিশ্চিত।

রত্নাবলী। গোপন কথা যদি হয় বলো না। কেবল এইটুকু জানতে চাই ঐ নটী কি আজ সন্ধ্যাবেলায় পূজা করবে আর রাজকন্যারা জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে?

মল্লিকা। না কিছুতেই না। আমি কথা দিচ্ছি।

রত্নাবলী। রাজগৃহলক্ষ্মী তোমার বাণীকে সার্থক করুন।


দ্বিতীয় অঙ্ক
রাজোদ্যান
লোকেশ্বরী ও মল্লিকা

মল্লিকা। পুত্রের সঙ্গে তো দেখা হল মহারানী। তবে এখনো কেন—

লোকেশ্বরী। পুত্রের সঙ্গে? পুত্র কোথায়? এ যে মৃত্যুর চেয়ে বেশি। আগে বুঝতে পারিনি।

মল্লিকা। এমন কথা কেন বলছেন।

লোকেশ্বরী। পুত্র যখন অপুত্র হয়ে মার কাছে আসে তার মতো দুঃখ আর নেই। কি রকম করে সে চাইলে আমার দিকে! তার মা একেবারে লুপ্ত হয়ে গেছে— কোথাও কোনো তার চিহ্নও নেই! নিজের এতবড়ো নিঃশেষে সর্বনাশ কল্পনাও করতে পারতুম না।

মল্লিকা। রক্তমাংসের জন্মকে সম্পূর্ণ ঘুচিয়ে ফেলে এঁরা যে নির্মল নূতন জন্ম লাভ করেন।

লোকেশ্বরী। হায় রে রক্তমাংস। হায় রে অসহ্য ক্ষুধা, অসহ্য বেদনা। রক্তমাংসের তপস্যা এদের এই শূন্যের তপস্যার চেয়ে কি কিছুমাত্র কম!

মল্লিকা। কিন্তু যাই বল দেবী, তাঁকে দেখলেম— সে কী রূপ! আলো দিয়ে ধোওয়া যেন দেবমূর্তিখানি।