বিহারীলাল

দু নয়ন ভরি ভরি দেখিব তোমায়।
দেখিয়ে মেটে না সাধ,
কী জানি কী আছে স্বাদ,
কী জানি কী মাখা আছে ও শুভ-আননে!
কী এক বিমল ভাতি
প্রভাত করেছে রাতি,
হাসিছে অমরাবতী নয়নকিরণে।
এমন সাধের ধনে
প্রতিবাদী জনে জনে–
দয়া মায়া নাই মনে, কেমন কঠোর!
আদরে গেঁথেছে বালা
হৃদয়কুসুমমালা,
কৃপাণে কাটিবে কে রে সেই ফুলডোর!
পুন কেন অশ্রুজল,
বহ তুমি অবিরল,
চরণকমল আহা ধুয়াও দেবীর!
মানসসরসী-কোলে
সোনার নলিনী দোলে,
আনিয়ে পরাও গলে সমীর সুধীর।
বিহঙ্গম, খুলে প্রাণ
ধরো রে পঞ্চম তান,
সারদামঙ্গলগান গাও কুতুহলে।’

কবি যে সূত্রে ‘সারদামঙ্গলে’র এই কবিতাগুলি গাঁথিয়াছেন তাহা ঠিক ধরিতে পারিয়াছি কি না জানি না–মধ্যে মধ্যে সূত্র হারাইয়া যায়, মধ্যে মধ্যে উচ্ছ্বাস উন্মত্ততায় পরিণত হয়–কিন্তু এ কথা বলিতে পারি আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে প্রেমের সংগীত এরূপ সহস্রাধার উৎসের মতো কোথাও উৎসারিত হয় নাই। এমন নির্মল সুন্দর ভাষা, এমন ভাবের আবেগ, কথার সহিত এমন সুরের মিশ্রণ আর কোথাও পাওয়া যায় না; বর্তমান সমালোচক এককালে ‘বঙ্গসুন্দরী’ ‘সারদামঙ্গলে’র কবির নিকট হইতে কাব্যশিক্ষার চেষ্টা করিয়াছিল, কতদূর কৃতকার্য হইয়াছে বলা যায় না, কিন্তু এই শিক্ষাটি স্থায়ীভাবে হৃদয়ে মুদ্রিত হইয়াছে যে, সুন্দর ভাষা কাব্যসৌন্দর্যের একটি প্রধান অঙ্গ; ছন্দে এবং ভাষার সর্বপ্রকার শৈথিল্য কবিতার পক্ষে সাংঘাতিক। এই প্রসঙ্গে আমার সেই কাব্যগুরুর নিকট আর-একটি ঋণ স্বীকার করিয়া লই। বাল্যকালে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’ নামক একটি গীতিনাট্য রচনা করিয়া “বিদ্বজনসমাগম”-নামক সম্মিলন উপলক্ষে অভিনয় করিয়াছিলাম। বঙ্কিমচন্দ্র এবং অন্যান্য অনেক রসজ্ঞ লোকের নিকট সেই ক্ষুদ্র নাটকটি প্রীতিপদ হইয়াছিল। সেই নাটকের মূল ভাবটি, এমন-কি, স্থানে স্থানে তাহার ভাষা পর্যন্ত বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গলে’র আরম্ভভাগ হইতে গৃহীত।

আজ কুড়ি বৎসর হইল ‘সারদামঙ্গল’ আর্যদর্শন পত্রে এবং ষোলো বৎসর হইল পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইয়াছে; ভারতী