ভগ্নহৃদয়
কি দারুণ বিশৃঙ্খল হয় তার হিয়া!
তেমনি বিপ্লব ঘোর হৃদয় ভিতরে
হ’তেছে দিবস নিশা, জানি না কি-তরে!
নবজাত উল্কানেত্র মহাপক্ষ গরুড় যেমন
বসিতে না পায় ঠাঁই চরাচর করিয়া ভ্রমণ,
উচ্চতম মহীরুহ পদভরে ভূমিতলে লুটে,
ভূধরের শিলাময় ভিত্তিমূল বিদারিয়া উঠে,
অবশেষে শূন্যে শূন্যে দিবারাত্রি ভ্রমিয়া বেড়ায়,
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ঢাকি ঘোর পাখার ছায়ায়,
তেমনি এ ক্লান্ত হৃদি বিশ্রামের নাহি পায় ঠাঁই—
সমস্ত ধরায় তার বসিবার স্থান যেন নাই।
তাই এই মহারণ্যে অমারাত্রে আসি গো একাকী,
মহান্‌ ভাবের ভারে     দুরন্ত এ ভাবনারে
কিছুক্ষণ-তরে তবু দমন করিয়া যেন রাখি।
চন্দ্রশূন্য আঁধারের নিস্তরঙ্গ সমুদ্রমাঝারে
সমস্ত জগৎ যবে মগ্ন হয়ে গেছে একেবারে
অসহায় ধরা এক মহামন্ত্রে হয়ে অচেতন
নিশীথের পদতলে করিয়াছে আন্তসমর্পণ,
তখন অধীর হৃদি অভিভূত হয়ে যেন পড়ে—
অতি ধীরে বহে শ্বাস, নয়নেতে পলক না নড়ে।
...
প্রাণের সমুদ্র এক আছে যেন এ দেহমাঝারে,
মহা উচ্ছ্বাসের সিন্ধু রুদ্ধ এই ক্ষুদ্র কারাগারে!
মনের এ রুদ্ধস্রোত দেহখানা করি বিদারিত
সমস্ত জগৎ যেন চাহে, সখি, করিতে প্লাবিত!
অনন্ত আকাশ যদি হ’ত এ মনের ক্রীড়াস্থল,
অগণ্য তারকারাশি হ’ত তার খেলেনা কেবল,
চৌদিকে দিগন্ত আসি রুধিত না অনন্ত আকাশ,
প্রকৃতি জননী নিজে পড়াত কালের ইতিহাস,
দুরন্ত এ মন-শিশু প্রকৃতির স্তন্য পান করি
আনন্দসংগীতস্রোতে ফেলিত গো শূন্যতল ভরি,