প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
দিদিভাই, তুমি যে বলতে কাননকুসুমিকা তোমার আদবে ভালো লাগে না, তা হলে বইখানা আর-একবার তো ফিরে পড়তে হবে—এবারে বোধ করি মত একটু-আধটু বদলাতেও পারে।
কমলমুখী। আমি ভাই, দরকার বুঝে মত বদলাতে পারি নে।
ইন্দুমতী। তা ভাই, শুনেছি স্বামীর জন্যে সবই করতে হয়—জীবনের অনেকখানি নতুন করে বদলে ফেলতে হয়। বিধাতা তো আর আমাকে ঠিক তাঁর শ্রীচরণকমলের মাপ নিয়ে বানান নি। স্বামীরা আবার কোথাও একটু আঁট সইতে পারেন না।
কমলমুখী। তা আমরা তাঁদের মনের মতো মত বদলাতে না পারলে তাঁরা তো আমাদের বদলে ফেলতে পারেন—তাতে তো কেউ বাধা দেবার নেই। আমি যা আছি তা আছি, এতদিন পরে যে কারো মনোরঞ্জনের জন্যে আবার ধার-করা মালমসলা নিয়ে আপনাকে ফরমাশে গড়তে হবে সে তো ভাই, আর পারব না। এতে যদি কারো পছন্দ না হয় তো সে আমার অদৃষ্টের দোষ।
ইন্দু্মতী। কিন্তু তোর তো সে কথা বলবার জো নেই, তাঁকে তো তোর পছন্দ করতেই হবে!
কমলমুখী। আমি তো আর স্বয়ম্বরা হতে যাচ্ছি নে বোন, তা আমার আবার পছন্দ! দুটো-একটা কাপড়চোপড় ছাড়া জীবনের কটা জিনিসই বা নিজের পছন্দ অনুসারে পাওয়া গেছে! বিধাতা কোনো বিষয়ে কারও তো মত জিজ্ঞাসা করেন না। আপনাকেই আপনি পছন্দ করে নিতে পারি নি। যদি পারতুম তা হলে বোধ হয় এর চেয়ে ঢের ভালো মানুষটিকে পেতুম— কিন্তু তবু তো আপনাকে কম ভালোবাসি নে— তাকেও বোধ হয় তেমনি ভালোবাসব!
ইন্দুমতী। তুই ভাই, কথায় কথায় বড়ো বেশি গম্ভীর হয়ে পড়িস। বিনোদের কাছে যদি অমনি করে থাকিস তা হলে সে তোর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে সাহস করবে না—
কমলমুখী। সে জন্যে নাহয় তুই নিযুক্ত থাকিস।
ইন্দু্মতী। তা হলে যে তোর গাম্ভীর্য আরো সাত গুণ বেড়ে যাবে। দেখ্ ভাই, তুই তো একটা পোষা কবি হাতে পেলি, এবার তাকে দিয়ে তোর নিজের নামে কবিতা লিখিয়ে নিস—যতক্ষণ পছন্দ না হয় ছাড়িস নে—চাই কি, দুটো-একটা খুব মিষ্টি সম্বোধন নিজে বসিয়ে দিতে পারিস। নিজের নামে কবিতা দেখলে কী রকম লাগে কে জানে।
কমলমুখী। মনে হয়, আমার নাম করে আর কাকে লিখছে। তোর যদি শখ থাকে আমি তোর নামে একটা লিখিয়ে নেব—
ইন্দুমতী। তুমি কেন, সে আমি নিজে করে নেব। আমার যে সম্পর্ক আমি যে কান ধরে লিখিয়ে নিতে পারি। তুমি তো তা পারবে না!
কমলমুখী। সে যখনকার কথা তখন হবে, এখন তোর চুলটা বেঁধে দিই চল্।
ইন্দুমতী। আজ থাক্ ভাই। আমি এখন ক্ষান্তদিদির ওখানে যাচ্ছি। আমার ভারি দরকার আছে।