তপতী
যদি আমার তপস্যা সার্থক হয়, যদি দেবতাকে প্রসন্ন করি তবে দূর হতে তোমাদের মঙ্গল করতে পারব। আমাকে কামনা কোরো না, এই তোমার কাছে আমার শেষ নিবেদন। আমাকে ত্যাগ করো, তোমাদের শান্তি হোক।”

বিক্রম। দেন নি, তিনি কিছুই দেন নি, সমস্ত ফাঁকি! নারী যে সুধা এনেছে আমার দীনতম প্রজারও ঘরে, আমি রাজ্যেশ্বর তার কণাও পাই নি— আমার দিন রাত্রি তৃষ্ণায় শুকিয়ে গেছে, সুধাসমুদ্রের তীরে বসে। নরেশ, আজ আমাকে কী করতে হবে বলো, আমি মন স্থির করতে পারছি নে।

নরেশ। মহারাজ, আমার কথা যদি শোনো তাঁকে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা কোরো না।

বিক্রম। কী বললে! করব না চেষ্টা! বিশ্বের সামনে আমার পৌরুষ ধিক্‌কৃত হবে! আনো আগে তাঁকে ফিরিয়ে, তার পর সর্বসমক্ষে তাঁকে ত্যাগ করব। রাষ্ট্রপালকে বলো তাঁকে আনুক বন্দী করে।

নরেশ। হবে না মহারাজ, সে হবে না, আমার প্রাণ থাকতে সে হতে দেব না।

বিক্রম। বিদ্রোহ?

নরেশ। হাঁ বিদ্রোহ! তুমি আত্মবিস্মৃত, তোমার অনুমোদন করে তোমার অবমাননা করতে পারব না। তোমার রাজ্যসীমা অতিক্রম করতে এখনো তাঁর তিন-চার দিন লাগবে। আমি নিজে যাব তাঁকে ফিরিয়ে আনতে।

বিক্রম। যাও, তবে এখনই যাও, শীঘ্র যাও।

[ নরেশের প্রস্থান

মন্ত্রী, তুমি ভাবছ, তাঁকে ক্ষমা করে ফিরিয়ে আনছি। একেবারেই নয়। রাজবিদ্রোহিণী তিনি, আমি নিজেই দিতেম তাঁকে নির্বাসন। আমার দণ্ড এড়িয়ে তিনি পালাচ্ছেন, এই আমার ক্ষোভ।

মন্ত্রী। মহারাজ, তাঁকে দণ্ড দেবার কথা বলে আমাদের সকলকে দুঃখ দিচ্ছেন। তিনি কাছে আসলেই দেখতে পাবেন তাঁকে দণ্ড দেবার সাধ্য আপনার নেই।

বিক্রম। তা হতে পারে, আমি মুগ্ধ। এ মোহপাশ যাক, যাক ছিন্ন হয়ে, আমি আনব না তাঁকে আমার কাছে। প্রতিহারী, রাজকুমার নরেশকে শীঘ্র ফিরিয়ে আনো। যেতে দাও, যেতে দাও, কাশ্মীরের কন্যাকে কাশ্মীরে ফিরে যেতে দাও।

মন্ত্রী। দাসের অনুনয় শুনুন মহারাজ। রাজকুমার নরেশ তাঁকে ফিরিয়ে আনুন, তার পরে আজকের দিনের এই ক্ষতবেদনা ভুলতে দেরি হবে না।

বিক্রম। মিনতি করে ফিরিয়ে আনা নয়, নয়, কিছুতেই নয়। একদিন যুদ্ধ করে তাঁকে জালন্ধরে এনেছি, পুনর্বার যুদ্ধ করেই তাঁকে জালন্ধরে ফিরিয়ে আনব।

মন্ত্রী। যুদ্ধ করে?

বিক্রম। হাঁ, যুদ্ধ করেই। কাশ্মীরের অভিমানে কাশ্মীরে চলেছেন— জালন্ধরের অপমান ঘোষণা করবেন! পদানত ধূলিশায়ী কাশ্মীরের চোখের উপর দিয়ে নিয়ে আসব তাঁকে বন্দিনী করে, যেমন করে দাসীকে নিয়ে আসে। এই কাশ্মীরের স্পর্ধা মনের মধ্যে গোপনে পোষণ করে এতদিন আমাকে উপেক্ষা করেছেন। এবার তলোয়ার দিয়ে তার মূল উৎপাটিত করে তবে আমি শান্তি পাব। মন্ত্রী, বৃথা তর্কের চেষ্টা কোরো না — এই মুহূর্তে সৈন্য প্রস্তুত করতে বলো গে।

মন্ত্রী। মহারাজ, ইতিমধ্যে তবে কি বিনা বাধায় বিদ্রোহী সামন্তরাজদের দেবে রাজ্য অধিকার করতে।

বিক্রম। না।

মন্ত্রী। তা হলে আপাতত এদের সঙ্গে যুদ্ধ সেরে তবে অন্য কথা।