শোধবোধ
করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত তো আমাকেই করতে হবে। দেখো, আমার বিষয়ের এক অংশ আমি তোমাকে লিখে দেব, সেটাকে তুমি দান মনে কোরো না, সে তোমার প্রাপ্য। আমি সমস্ত ঠিক করে রেখেছি — পরশু শুক্রবারে রেজেস্‌ট্রি করে দেব।

সতীশ। (শশধরের পায়ের ধুলা লইয়া) মেসোমশায়, কী আর বলব —তোমার এই স্নেহে —

শশধর। আচ্ছা, থাক্‌ থাক্‌! ওসব স্নেহ-ফ্নেহ আমি কিছু বুঝি নে, রস-কস আমার কিছুই নেই। যা কর্তব্য তা কোনোরকমে পালন করতেই হবে, এই বুঝি। সাড়ে-আটটা বাজল, তুমি আজ কোরিন্থিয়ানে যাবে বলেছিলে, যাও। — সতীশ, একটা কথা তোমাকে বলে রাখি। দানপত্রখানা আমি মিস্টার লাহিড়িকে দিয়েই লিখিয়ে নিয়েছি। ভাবে বোধ হল, তিনি এই ব্যাপারে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন — তোমার প্রতি যে টান নেই এমন তা দেখা গেল না। এমন-কি, আমি চলে আসবার সময় তিনি আমাকে বললেন, সতীশ আজকাল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে না কেন। আরো-একটা সুখবর আছে সতীশ, তোমাকে যে-আপিসে কাজ করিয়ে দিয়েছি সেখানকার বড়োসাহেব তোমার খুব সুখ্যাতি করছিলেন।

সতীশ। সে আমার গুণে নয়। তোমাকে ভক্তি করেন বলেই আমাকে এত বিশ্বাস করেন।

[প্রস্থান

শশধর। ওরে রামচরণ, তোর মাঠাকুরানীকে একবার ডেকে দে তো।

 

সুকুমারীর প্রবেশ

সুকুমারী। কী স্থির করলে।

শশধর। একটা চমৎকার প্ল্যান ঠাউরেছি।

সুকুমারী। তোমার প্ল্যান যত চমৎকার হবে সে আমি জানি। যা হোক, সতীশকে এ বাড়ি থেকে বিদায় করেছ তো।

শশধর। তাই যদি না করব, তবে আর প্ল্যান কিসের। আমি ঠিক করেছি,সতীশকে আমাদের তরফ মানিকপুর লিখে-পড়ে দেব — তা হলেই সে স্বচ্ছন্দে নিজের খরচ চালিয়ে আলাদা হয়ে থাকতে পারবে। তোমাকে আর বিরক্ত করবে না।

সুকুমারী। আহা, কী সুন্দর প্ল্যানই ঠাউরেছ। সৌন্দর্যে আমি একেবারে মুগ্ধ! না না, তুমি অমন পাগলামি করতে পারবে না। আমি বলে দিলাম।

শশধর। দেখো, এক সময়ে তো ওকেই সমস্ত সম্পত্তি দেবার কথা ছিল।
সুকুমারী। তখন তো আমার হরেন জন্মায় নি। তা ছাড়া তুমি কি ভাব, তোমার আর ছেলেপুলে হবে না?

শশধর। সুকু, ভেবে দেখো, আমাদের অন্যায় হচ্ছে। মনেই করো-না কেন তোমার দুই ছেলে।

সুকুমারী। সে আমি অতশত বুঝি নে — তুমি যদি এমন কাজ কর তবে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরব — এই আমি বলে গেলেম।

[প্রস্থান

সতীশের প্রবেশ

শশধর। কী সতীশ, থিয়েটারে গেলে না?

সতীশ। না মেসোমশায়, আর থিয়েটার না। এই দেখো, দীর্ঘকাল পরে মিস্টার লাহিড়ির কাছ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছি। তোমার দানপত্রের ফল দেখো। সংসারের উপর আমার ধিক্কার জন্মে গেছে, মেসোমশায়। আমি তোমার সে তালুক নেব না।