রাজা ও রানী

যষ্টিহস্তে কষ্টে শংকরের প্রবেশ

চন্দ্রসেনের প্রতি

   শংকর।                           মহারাজ!

এ কি সত্য? যুবরাজ আসিছেন নিজে

শত্রুকরে করিবারে আত্মসমর্পণ?

বলো, এ কি সত্য কথা?

  চন্দ্রসেন।                           সত্য বটে।

   শংকর।                                         ধিক্,

সহস্র মিথ্যার চেয়ে এই সত্যে ধিক্

হায় যুবরাজ, বৃদ্ধ ভৃত্য আমি তব,

সহিলাম এত যে যন্ত্রণা, জীর্ণ অস্থি

চূর্ণ হয়ে গেল মূকসম রহিলাম

তবু, সে কি এরি তবে? অবশেষে তুমি

আপনি ধরিলে বন্দীবেশ, কাশ্মীরের

রাজপথ দিয়ে চলে এলে নতশিরে

বন্দীশালা-মাঝে? এই কি সে রাজসভা

পিতামহদের? যেথা বসি পিতা তব

উঠিতেন ধরণীর সর্ব্বোচ্চ শিখরে

সে আজ তোমার কাছে ধরার ধুলার

চেয়ে নীচে! তার চেয়ে নিরাশ্রয় পথ

গৃহতুল্য, অরণ্যের ছায়া সমুজ্জ্বল,

কঠিনপর্বতশৃঙ্গ অনুর্বরমরু

রাজার সম্পদে পূর্ণ। চিরভৃত্য তব

আজি দুর্দিনের আগে মরিল না কেন?

বিক্রমদেব।  ভালো হতে মন্দটুকু নিয়ে, বৃদ্ধ, মিছে

এ তব ক্রন্দন।

   শংকর।                  রাজন্‌, তোমার কাছে

আসি নি কাঁদিতে। স্বর্গীয় রাজেন্দ্রগণ

রয়েছেন জাগি ওই সিংহাসন-কাছে,

আজি তাঁরা ম্লানমুখ, লজ্জানতশির,

তাঁরা বুঝিবেন মোর হৃদয়-বেদনা।