শোধবোধ

নলিনী। সতীশ, তুমি কখনো কোনো পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারলে না। স্বয়ং নন্দীসাহেবও বোধ হয় অমন প্রশ্ন তুলতেন না। তোমাদের এক চুলও প্রশ্রয় দেওয়া চলে না।

সতীশ। তোমাকে আমি আজও চিনতে পারলেম না নেলি।

নলিনী। চিনবে কেমন করে। আমি তো তোমার হাল ফেশানের টাই নই —কলার কই — দিনরাত যা নিয়ে ভাব তাই তুমি চেন।

সতীশ। আমি হাত জোড় করে বলছি নেলি, তুমি আজ আমাকে এমন কথা বোলো না। আমি যে কী নিয়ে ভাবি তা তুমি নিশ্চয় জান।

নলিনী। ঐ-যে, বাবা ডাকছেন। তাঁর কাজ হয়ে গেছে। যাই।

[ উভয়ের প্রস্থান
সুকুমারী ও শশধরের প্রবেশ

সুকুমারী। দেখো, তোমাকে জানিয়ে রাখছি, আমার হরেনকে মারবার জন্যেই ওরা মায়ে-পোয়ে উঠে-পড়ে লেগেছে।

শশধর। আঃ, কী বল। তুমি কি পাগল হয়েছ নাকি।

সুকুমারী। আমি পাগল না তুমি চোখে দেখতে পাও না!

শশধর। কোনোটাই আশ্চর্য নয়, দুটোই সম্ভব। কিন্তু —

সুকুমারী। আমাদের হরেনের জন্ম হতেই দেখ নি ওদের মুখ কেমন হয়ে গেছে? সতীশের ভাবখানা দেখে বুঝতে পার না!

শশধর। আমার অত ভাব বুঝবার ক্ষমতা নেই, সে তো তুমি জানই।

সুকুমারী। সতীশ যখনই আড়ালে পায় তোমার ছেলেকে মারে, আবার বিধুও তার পিছনে পিছনে এসে খোকাকে জুজুর ভয় দেখায়।

শশধর। ঐ দেখো, তোমরা ছোটো কথাকে বড়ো করে তোলো। যদিই বা সতীশ খোকাকে কখনো —

সুকুমারী। সে তুমি সহ্য করতে পার, আমি পারব না — ছেলেকে তো তোমার গর্ভে ধরতে হয় নি।

শশধর। সে-কথা আমি অস্বীকার করতে পারব না। এখন তোমার অভিপ্রায় কী শুনি।

সুকুমারী। শিক্ষা সম্বন্ধে তুমি তো বড়ো বড়ো কথা বল, একবার তুমি ভেবে দেখো-না, আমরা হরেনকে যে-ভাবে শিক্ষা দিতে চাই তার মাসি তাকে অন্যরূপ শেখায় — সতীশের দৃষ্টান্তটিই বা তার পক্ষে কী রকম, সেটাও তো ভেবে দেখতে হয়।

শশধর। তুমি যখন অত বেশি করে ভাবছ, তখন তার উপরে আমার আর ভাববার দরকার কী আছে। এখন কর্তব্য কী বলো।

সুকুমারী। আমি বলি, সতীশকে তুমি বলো — পুরুষমানুষ পরের পয়সায় বাবুগিরি করে, সে কি ভালো দেখতে হয়। আর, যার সামর্থ্য কম তার অত লম্বা চালেই বা দরকার কী।

শশধর। মন্মথ সেই কথাই বলত। আমরাই তো সতীশকে অন্যরূপ বুঝিয়েছিলেম। এখন ওকে দোষ দিই কী করে।

সুকুমারী। না — দোষ কি ওর হতে পারে! সব দোষ আমারই। তুমি তো আর কারো কোনো দোষ দেখতে পাও না — কেবল আমার বেলাতেই —

শশধর। ওগো, রাগ কর কেন — আমিও তো দোষী।