বিসর্জন

সেনাপতি, ডেকে আন্‌! হায় রঘুপতি,

অবশেষে সৈন্য দিয়ে ঘিরিতে হইল

ধর্ম! লজ্জা হয় ডাকিতে সৈনিকদল,

বাহুবল দুর্বলতা করায় স্মরণ।

রঘুপতি।     অবিশ্বাসী, সত্যই কি হয়েছে ধারণা

কলিযুগে ব্রহ্মতেজ গেছে — তাই এত

দুঃসাহস? যায় নাই। যে দীপ্ত অনল

জ্বলিছে অন্তরে, সে তোমার সিংহাসনে

নিশ্চয় লাগিবে। নতুবা এ মনানলে

ছাই করে পুড়াইব সব শাস্ত্র, সব

ব্রহ্মগর্ব, সমস্ত তেত্রিশ কোটি মিথ্যা।

আজ নহে মহারাজ, রাজ-অধিরাজ,

এই দিন মনে কোরো আর-এক দিন।

 

নয়নরায় ও চাঁদপালের প্রবেশ

 

নয়নের প্রতি

গোবিন্দমাণিক্য।   সৈন্য লয়ে থাকো হেথা নিষেধ করিতে

জীববলি।

নয়নরায়।    ক্ষমা করো অধম কিংকরে।

অক্ষম রাজার ভৃত্য দেবতামন্দিরে।

যতদূর যেতে পারে রাজার প্রতাপ

মোরা ছায়া সঙ্গে যাই।

চাঁদপাল।                     থামো সেনাপতি,

দীপশিখা থাকে এক ঠাঁই, দীপালোক

যায় বহুদূরে। রাজ-ইচ্ছা যেথা যাবে

সেথা যাব মোরা।

গোবিন্দমাণিক্য।               সেনাপতি, মোর আজ্ঞা

তোমার বিচারাধীন নহে। ধর্মাধর্ম

লাভক্ষতি রহিল আমার, কার্য শুধু

তব হাতে।

নয়নরায়।            এ কথা হৃদয় নাহি মানে।

মহারাজ, ভৃত্য বটে, তবুও মানুষ