শোধবোধ
সতীশের প্রস্থানোদ্যম

শোনো সতীশ, এই কটা জিনিস কিনতে আবার যেন আড়াইটাকা গাড়িভাড়া লাগিয়ে বোসো না। ঐজন্যে তোমাকে কিছু আনতে বলতে ভয় করে। দু’পা হেঁটে চলতে হলেই অমনি তোমার মাথায়-মাথায় ভাবনা পড়ে — পুরুষমানুষ এত বাবু হলে তো চলে না। তোমার বাবা রোজ সকালে নিজে হেঁটে গিয়ে নতুনবাজার থেকে মাছ কিনে আনতেন — মনে আছে তো? মুটেকেও তিনি এক পয়সা দেন নি।

সতীশ। তোমার উপদেশ মনে থাকবে — আমিও দেব না। আজ হতে তোমার এখানে মুটেভাড়া, বেহারার মাইনে, যত অল্প লাগে সে দিকে আমার সর্বদাই দৃষ্টি থাকবে —

[ সুকুমারীর প্রস্থান

সেই চিঠিটা এইবেলা শেষ করি, নইলে সময় পাব না।

[ চিঠি লিখিতে প্রবৃত্ত
হরেনের প্রবেশ

হরেন। দাদা, ও কী লিখছ, কাকে লিখছ, বলো-না।

সতীশ। যা যা, তোর সে-খবরে কাজ কী, তুই খেলা কর‌্‌‍গে যা।

হরেন। দেখি-না কী লিখছ — আমি আজকাল পড়তে পারি।

সতীশ। হরেন, তুই আমাকে বিরক্ত করিস নে বলছি — যা তুই।

হরেন। ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার বা, সয়ে আকার সা —ভালোবাসা। দাদা, কী ভালোবাসার কথা লিখছ, বলো-না। কাঁচা পেয়ারা?

সতীশ। আঃ হরেন, অত চেঁচাস নে। ভালোবাসার কথা আমি লিখি নি।

হরেন। অ্যাঁ, মিথ্যা কথা বলছ! ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার সয়ে আকার — ভালোবাসা। আচ্ছা, মাকে ডাকি, তাঁকে দেখাও।

সতীশ। না না, মাকে ডাকতে হবে না। লক্ষ্মীটি, তুই একটু খেলা করতে যা, আমি এইটে শেষ করি।

হরেন। এটা কী, দাদা। এ-যে ফুলের তোড়া। আমি নেব।

সতীশ। ওতে হাত দিস্‌ নে — হাত দিস্‌ নে, ছিঁড়ে ফেলবি।

হরেন। না, আমি ছিঁড়ে ফেলব না, আমাকে দাও-না।

সতীশ। খোকা, কাল তোকে অনেক তোড়া এনে দেব, এটা থাক্‌।

হরেন। দাদা, এটা বেশ, আমি এইটেই নেব।

সতীশ। না, এ আর-একজনের জিনিস, আমি তোকে দিতে পারব না।

হরেন। অ্যাঁ, মিথ্যে কথা। আমি তোমাকে লজঞ্জুস আনতে বলেছিলেম, তুমি সেই টাকায় তোড়া এনেছ — তাই বৈকি, আরেকজনের জিনিস বৈকি!

সতীশ। হরেন, লক্ষ্মী ভাই, একটুখানি চুপ কর্, চিঠিখানা শেষ করে ফেলি। কাল তোকে আমি অনেক লজঞ্জুস কিনে এনে