রাজা ও রানী

সুমিত্রা। না বাছা, এসো তোমরা। এখানে তোমাদের কোনো ভয় নেই। কে তোমাদের উপর দৌরাত্ম্য করেছে?

পুরুষ। এই জয়সেন। আমরা রাজার কাছে দুঃখু জানাতে গিয়েছিলেম, রাজদর্শন পেলেম না। ফিরে এসে দেখি আমাদের ঘরদোর জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমাদের ছেলেটিকে বেঁধে রেখেছে।

সুমিত্রা। ( স্ত্রীলোকের প্রতি) হাঁ গা, তা তুমি রানীকে গিয়ে জানালে না কেন?

স্ত্রী। ওগো, রানীই তো রাজাকে জাদু করে রেখেছে। আমাদের রাজা ভালো, রাজার দোষ নেই — ঐ বিদেশ থেকে এক রানী এসেছে, সে আপন কুটুম্বদের রাজ্য জুড়ে বসিয়েছে। প্রজার বুকের রক্ত শুষে খাচ্ছে গো!

পুরুষ। চুপ কর্ মাগী! তুই রানীর কী জানিস? যেকথা জানিস নে, তা মুখে আনিস নে।

স্ত্রী। জানি গো জানি। ঐ রানীই তো বসে বসে রাজার কাছে আমাদের নামে যত কথা লাগায়।

সুমিত্রা। ঠিক বলেছ বাছা! ঐ রানী সর্বনাশীই তো যত নষ্টের মূল। তা, সে আর বেশি দিন থাকবে না, তার পাপের ভরা পূর্ণ হয়েছে। এই নাও, আমার সাধ্যমত কিছু দিলাম, সব দুঃখ দূর করতে পারি নে।

পুরুষ। আহা, তুমি কোনো রাজার ছেলে হবে, তোমার জয় হোক।

সুমিত্রা। আর বিলম্ব নয়, এখনি যাব।

[ প্রস্থান

 

ত্রিবেদীর প্রবেশ

ত্রিবেদী। হে হরি, কী দেখলুম! পুরুষমূর্তি ধরে রানী সুমিত্রা ঘোড়ায় চড়ে চলেছেন। মন্দিরে দেবপূজোর ছলে এসে রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছেন। আমাকে দেখে বড়ো খুশি। মধুসূদন! ভাবলে 'ব্রাহ্মণ বড়ো সরল-হৃদয়, মাথার তেলোয় যেমন একগাছি চুল দেখা যায় না, তলায় তেমনি বুদ্ধির লেশমাত্র নেই। একে দিয়ে একটা কাজ করিয়ে নেওয়া যাক। এর মুখ দিয়ে রাজাকে দুটো মিষ্টি কথা পাঠিয়ে দেওয়া যাক।' বাবা, তোমরা বেঁচে থাকো। যখনি তোমাদের কিছু দরকার পড়বে বুড়ো ত্রিবেদীকে ডেকো, আর দান-দক্ষিণের বেলায় দেবদত্ত আছেন। দয়াময়! তা বলব! খুব মিষ্টি মিষ্টি করেই বলব। আমার মুখে মিষ্টি কথা আরো বেশি মিষ্টি হয়ে ওঠে। কমললোচন!রাজা কী খুশিই হবে। কথাগুলো যত বড়ো বড়ো করে বলব রাজার মুখের হাঁ তত বেড়ে যাবে। দেখেছি, আমার মুখে বড়ো কথাগুলো শোনায় ভালো। লোকের বিশেষ আমোদ বোধ হয়। বলে, ব্রাহ্মণ বড়ো সরল। পতিতপাবন! এবারে কতটা আমোদ হবে বলতে পারি নে। কিন্তু শব্দশাস্ত্র একেবারে উলট-পালট করে দেব। আঃ কী দুর্যোগ! আজ সমস্ত দিন দেবপুজো হয় নি, এইবার একটু পুজো-অর্চনায় মন দেওয়া যাক। দীনবন্ধু ভক্তবৎসল!

[ প্রস্থান