প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নন্দ। চাষাভুষোর মুখে যে-কথাটা ছোট্ট বড়োলোকের মুখে সেইটেই কত বড়ো শোনায়।
মন্সুখ। কিন্তু কথাটা ভালো, ‘ বাড়াবাড়ি কিছু নয় ’ শুনে রাজার চোখ ফুটবে।
জওহর। কিন্তু ওই একটাতে হবে না, আরও শাস্তর চাই।
মন্নুরাম। তা আমার পুঁজি আছে, আমি বলব —
লালনে বহবো দোষাস্তাড়নে বহবো গুণাঃ।
তস্মাৎ মিত্রঞ্চ পুত্রঞ্চ তাড়য়েৎ ন তু লালয়েৎ॥
তা আমরা কি পুত্র নই? হে মহারাজ, আমাদের তাড়না করবে না — ঐটে ভালো নয়।হরিদীন। এ ভালো কথা, মস্ত কথা, ঐ-যে কী বললে — ও কথাগুলো শোনাচ্ছে ভালো।
শ্রীহর। কিন্তু কেবল শাস্তর বললে তো চলবে না — আমার ঘানির কথাটা কখন আসবে? অমনি ঐসঙ্গে জুড়ে দিলে হয় না?
নন্দ। বেটা, তুমি ঘানির সঙ্গে শাস্তর জুড়বে? এ কি তোমার গোরু পেয়েছ?
জওহর। কলুর ছেলে, ওর আর কত বুদ্ধি হবে!
কুঞ্জর। দু ঘা না পিঠে পড়লে ওর শিক্ষা হবে না। কিন্তু আমার কথাটা কখন পাড়বে? মনে থাকবে তো! আমার নাম কুঞ্জরলাল। কাঞ্জিলাল নয় — সে আমার ভাইপো, সে বুধকোটে থাকে — সে যখন সবে তিন বছর তখন তাকে —
হরিদীন। সব বুঝলুম, কিন্তু যে-রকম কাল পড়েছে, রাজা যদি শাস্তর না শোনে?
কুঞ্জর। তখন আমরাও শাস্তর ছেড়ে অস্তর ধরব।
কিনু। শাবাশ বলেছ, শাস্তর ছেড়ে অস্তর!
মন্সুখ। কে বললে হে? কথাটা কে বললে?
কুঞ্জর। ( সগর্বে) আমি বলেছি। আমার নাম কুঞ্জরলাল, কাঞ্জিলাল আমার ভাইপো।
কিনু। তা ঠিক্ বলেছ ভাই — শাস্তর আর অস্তর — কখনো শাস্তর কখনো অস্তর — আবার কখনো অস্তর কখনো শাস্তর।
জওহর। কিন্তু বড়ো গোলমাল হচ্ছে। কথাটা কী যে স্থির হল বুঝতে পারছি নে। শাস্তর না অস্তর?
শ্রীহর। বেটা তাঁতি কি না, এইটে আর বুঝতে পারলি নে? তবে এতক্ষণ ধরে কথাটা হল কী? স্থির হল যে শাস্তরের মহিমা বুঝতে ঢের দেরি হয়, কিন্তু অন্তরের মহিমা খুব চটপ্ট্ বোঝা যায়।
অনেকে। ( উচ্চস্বরে) তবে শাস্তর চুলোয় যাক — অস্তর ধরো।
দেবদত্তের প্রবেশ
দেবদত্ত। বেশি ব্যস্ত হবার দরকার করে না, চুলোতেই যাবে শিগগির, তার আয়োজন হচ্ছে। বেটা, তোরা কী বলছিলি রে?
শ্রীহর। আমরা ওই ভদ্রলোকের ছেলেটির কাছে শাস্তর শুনছিলুম ঠাকুর!
দেবদত্ত। এমনি মন দিয়েই শাস্তর শোনে বটে! চীৎকারের চোটে রাজ্যের কানে তালা ধরিয়ে দিলে। যেন ধোবাপাড়ায়