ফাল্গুনী

মন্ত্রী, এখনো বাজাচ্ছে।

মহারাজ, দাসের স্থূলবুদ্ধি মাপ করবেন, বুঝতে পারলুম না।

এই চেয়ে দেখো —

মহারাজের চুল —

ওখানে একজন ঘণ্টা-বাজিয়েকে দেখতে পাচ্ছ না?

দাসের সঙ্গে পরিহাস?

পরিহাস আমার নয় মন্ত্রী, যিনি পৃথিবীসুদ্ধ জীবের কানে ধরে পরিহাস করেন এ তাঁরই। গত রজনীতে আমার গলায় মল্লিকার মালা পরাবার সময় মহিষী চমকে উঠে বললেন, এ কী মহারাজ, আপনার কানের কাছে দুটো পাকাচুল দেখছি যে!

মহারাজ, এজন্য খেদ করবেন না — রাজবৈদ্য আছেন, তিনি —

এ বংশের প্রথম রাজা ইক্ষ্বাকুরও রাজবৈদ্য ছিলেন, তিনি কি করতে পেরেছিলেন। — মন্ত্রী, যমরাজ আমার কানের কাছে তাঁর নিমন্ত্রণপত্র ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছেন। মহিষী এ দুটো চুল তুলে ফেলতে চেয়েছিলেন, আমি বললুম,কী হবে রানী। যমের পত্রই যেন সরালুম কিন্তু যমের পত্রলিখককে তো সরানো যায় না। অতএব এ পত্র শিরোধার্য করাই গেল। এখন তা হলে —

যে আজ্ঞা এখন তা হলে রাজকার্যের আয়োজন —

কিসের রাজকার্য। রাজকার্যের সময় নেই — শ্রুতিভূষণকে ডেকে আনো।

সেনাপতি বিজয়বর্মা —

না, বিজয়বর্মা না শ্রুতিভূষণ।

মহারাজ, এ দিকে চীন-সম্রাটের দূত —

তাঁর চেয়ে বড়ো সম্রাটের দূত অপেক্ষা করছেন — ডাকো শ্রুতিভূষণকে।

মহারাজ, প্রত্যন্তসীমার সংবাদ —

মন্ত্রী, প্রত্যন্ততম সীমার সংবাদ এসেছে, ডাকো শ্রুতিভূষণকে।

মহারাজের শ্বশুর —

আমি যাঁর কথা বলছি তিনি আমার শ্বশুর নন। ডাকো শ্রুতিভূষণকে। আমাদের কবিশেখর তাঁর কল্পমঞ্জরী কাব্য নিয়ে—

নিয়ে তিনি তাঁর কল্পদ্রুমের শাখায় প্রশাখায় আনন্দে সঞ্চরণ করুন, ডাকো শ্রুতিভূষণকে।

যে আদেশ, তাঁকে ডাকতে পাঠাচ্ছি।

বোলো, সঙ্গে যেন তাঁর বৈরাগ্যবারিধি পুঁথিটা আনেন।

প্রতিহারী, বাইরে ঐ কারা গোল করছে, বারণ করো, আমি একটু শান্তি চাই।

নাগপত্তনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, প্রজারা সাক্ষাৎ প্রার্থনা করে।

আমার তো সময় নেই মন্ত্রী, আমি শান্তি চাই।

তারা বলছে তাদের সময় আরো অনেক অল্প — তারা মৃত্যুর দ্বার প্রায় লঙ্ঘন করেছে — তারা ক্ষুধাশান্তি চায়।

ক্ষুধাশান্তি! এ সংসারে কি ক্ষুধার শান্তি আছে। ক্ষুধানলের শান্তি চিতানলে।