শেষরক্ষা
বিধাতা একে এবং এর অন্য গোরুগুলিকে গোয়ালসুদ্ধ আমারই হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন।

কমল। ইন্দু, তুই কী যে বকিস আমি তোর সঙ্গে পেরে উঠি নে। গদাই গয়লাকে তুই বিয়ে করতে যাবি কেন, সে একে গয়লা, তাতে আবার তার দুই বিয়ে।

ইন্দু। আচ্ছা না হয় গদাই গয়লা না হল — পৃথিবীতে গদাইচন্দ্রের তো অভাব নেই।

কমল। তা তোর অদৃষ্টে যদি কোনো গদাই থাকে তা হলে অবিশ্যি তাকে ভালোবাসবি —

ইন্দু। কক্‌খনো বাসব না। আচ্ছা, তুমি দেখো। বিয়ে করেছি বলেই যে অমনি তার পরদিন থেকে গদাই গদাই করে গদগদ হয়ে বেড়াব, আমাকে তেমন মেয়ে পাও নি। আমি দিদি, তোর মতন না ভাই!

কমল। আসল জানিস, ইন্দু? ওদের না হলে আমাদের চলতে পারে, কিন্তু আমাদের না হলে পুরুষমানুষের চলে না, সেইজন্যে ওদের আমরা ভালোবাসি।

নিবারণের প্রবেশ

 

নিবারণ। মা, তোমাকে দেখলে আমি চোখের জল রাখতে পারি নে। আমার মার কাছে আমি অপরাধী। তোমার কাছে আমার দাঁড়ানো উচিত হয় না।

কমল। কাকা, আপনি অমন করে বলবেন না, আমার অদৃষ্টে যা ছিল তাই হেয়েছে —

ইন্দু। বাবা, আসলে যার অপরাধ তাকে কিছু না বলে তার অপরাধ তোমরা পাঁচজনে কেন ভাগ করে নিচ্ছ, আমি তো বুঝতে পারি নে।

নিবারণ। থাক্‌ মা, সে-সব আলোচনা থাক্‌ — এখন একটা কাজের কথা বলি। কমল, মন দিয়ে শোনো। তোমাকে এতদিন গরিবের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়ে এসেছি, সে কথাটা ঠিক নয়। তোমার বাপের সম্পত্তি নিতান্ত সামান্য ছিল না, আমারই হাতে সে-সমস্ত আছে। ইতিমধ্যে অনেক টাকা জমেছে এবং সুদেও বেড়েছে ; তোমার কুড়ি বছর বয়স হলে তবে তোমার পাবার কথা। সময় হয়েছে, এখন নাও তোমার বিষয়। সেই টানে হয়তো স্বামীও এসে পড়বে।

কমল। কাকা, তাঁকে আপনি এ সংবাদ দেবেন না। কথাটা যাতে কেউ টের না পায়, আপনাকে তাই করতে হবে।

নিবারণ। কেন বলো দেখি মা?

কমল। একটু কারণ আছে। সমস্তটা ভেবে আপনাকে পরে বলব।

নিবারণ। আচ্ছা।

[ প্রস্থান

ইন্দু। তোর মতলবটা কী আমাকে বল্‌ তো।

কমল। আমি আর-একটা বাড়ি নিয়ে ছদ্মবেশে ওঁর কাছে অন্য স্ত্রীলোক বলে পরিচয় দেব।

ইন্দু। সে তো বেশ হবে ভাই! ওরা ঠিক নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে সুখ পায় না। কিন্তু বরাবর রাখতে পারবি তো?

কমল। বরাবর রাখবার ইচ্ছে তো আমার নেই, বোন —

ইন্দু। ফের আবার একদিন স্বামী-স্ত্রী সাজতে হবে নাকি?

কমল। হাঁ, ভাই, যতদিন যবনিকাপতন না হয়। ঐ শিবচরণবাবু বোধ হয় আসছেন, চলো পালাই।

[ উভয়ের প্রস্থান