শেষরক্ষা

চন্দ্রকান্ত। যে কাজ বল তাতেই রাজি আছি, কিন্তু ঘটকালি আর করছি নে।

গদাই। ঐ ঘটকালিই করতে হবে।

চন্দ্রকান্ত। ( ব্যগ্রভাবে) কী রকম শুনি।

গদাই। বাগবাজারের চৌধুরীদের বাড়ির কাদম্বিনী, তার সঙ্গে আমার —

চন্দ্রকান্ত। ( উচ্চস্বরে) গদাই, তোমারও কবিত্ব। তবে আমারও স্নায়ু বলে একটা বালাই আছে।

গদাই। তা আছে ভাই। বোধ হয়, একটু বেশি পরিমাণেই আছে। অবস্থা এমনি হয়েছে যে শিগগির আমার একটা সদ্‌গতি না করলে —

চন্দ্রকান্ত। বুঝেছি। কিন্তু গদাই, আর স্ত্রীহত্যার পাতকে আমাকে লিপ্ত করিস নে।

গদাই। কিছু ভেবো না ভাই। পাপ করেছে বিনোদ, তার রিডেম্‌প্‌শন্‌ আমার দ্বারা।

চন্দ্রকান্ত। ভ্যালা মোর দাদা! আমি এক্‌খনি যাচ্ছি। চাদরখানা নিয়ে আসি। অমনি বড়োবউয়ের পরামর্শটাও জানা ভালো।

[ প্রস্থান

অনতিবিলম্বে ছুটিয়া আসিয়া

 

চন্দ্রকান্ত। বড়োবউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে! তোদের সংসর্গ লাভ করতে আসি, আর হারাই আমার স্ত্রীর সংসর্গ— আমার ঘটল মুকুতার বদলে শুকুতা।

বিনোদের প্রবেশ

বিনোদ। চন্দরদা, তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এলে ভাই! আমি আর থাকতে পারলুম না।

চন্দ্রকান্ত। না ভাই, তোদের উপর কি রাগ করতে পারি? তবে দুঃখ হয়েছিল তা স্বীকার করি।

বিনোদ। কী করব চন্দরদা! আমি এত চেষ্টা করছি কিছুতেই পেরে উঠছি নে —

চন্দ্রকান্ত। কেন বল্‌ দেখি। ওর মধ্যে শক্তটা কী? মেয়েমানুষকে ভালোবাসতে পারিস নে।

বিনোদ। চন্দরদা, কী জানি ভাই বিয়ে না করাটাই মুখস্থ হয়ে গেছে।

চন্দ্রকান্ত। তোর পায়ে পড়ি বিনু, তুই আমার গা ছুঁয়ে বল্‌, নিদেন আমার খাতিরে তোর স্ত্রীকে ভালোবাসবি। মনে কর্, তুই আমার বোনকে বিয়ে করেছিস।

বিনোদ। চন্দরদা, যাকেই হোক, বিয়ে যে করেছি সেটা বুঝতে তো বাকি নেই। মুশকিল হয়েছে সেটা কিছু অধিক পরিমাণেই বুঝতে পারছি। তার প্রধান কারণ টাকার টানাটানি। যতদিন একলা রাজত্ব করেছিলেম অমর্যাদা ছিল না। আর-একটিকে পাশে বসবামাত্র দেখি, ভাঙা সিংহাসন মড়্‌ মড়্‌ করে উঠছে। আজ অভাবগুলো চার দিক থেকে বড়ো বেআব্রু হয়ে দেখা দিল — সেটা কি ভালো লাগে?

গদাই। তুমি বলতে চাও, তোমার ভালোবাসার অভাব নেই, অভাব কেবল টাকার?

বিনোদ। ভালোবাসা আছে বলেই তো বুঝতে পারছি, যথেষ্ট টাকা নেই। পাত্র যে ফুটো সেটা ধরা পড়ল যখন তাতে সুধা ঢালা গেল। ঝাঁঝরি দিয়ে মধু খেতে গিয়ে সমস্ত গা যে যায় ভেসে। হালকা ছিলুম, দারিদ্র্যের উপর দিয়ে সাঁতার কেটে গেছি, আর-একজনকে কাঁধে নেবামাত্র তার তলার দিকে তলাচ্ছি — যেখানটাতে পাঁক।