শেষরক্ষা

ইন্দু। স্বয়ং দিনমণির কাছ থেকে।

কমল। একটু স্পষ্ট ভাষায় কথা ক।

ইন্দু। আমার চেয়ে ঢের বেশি অস্পষ্ট ভাষায় যিনি কাব্য রচনা করেন সেই কবি স্বয়ং এই ঘরে পরিদৃশ্যমান হয়েছিলেন।

কমল। কী কারণে?

ইন্দু। তোমার উপর করক্ষেপ করবার দাবি জানিয়ে যেতে। এতদিন যিনি ছিলেন তোমার কানের শোনা, এখন তিনি হবেন তোমার নয়নের মণি, বাবার কাছে স্বয়ং দরবার জানিয়ে গেছেন। তোমার মনের মানুষ এখন থেকে তোমারই কোণের মানুষ হবার উমেদার, কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে গেছে। সুখবর কিনা বলো, দিদি!

কমল। এখনো বলবার সময় হয় নি।

ইন্দু। বলিস কী ভাই! কাব্যের চেয়ে কবির দাম বেশি নয়?

কমল। দামের তুলনা করব কী করে? দুটো জিনিস এক জাতের নয়, যেমন মধু আর মধুকর।

ইন্দু। সে কথা মানি, যেমন বাঁশ আর বাঁশি। বাঁশি যেরকম করে বাজে বাঁশ ঠিক তার বিপরীতভাবে অন্তরে বাহিরে বাজতে পারে। তা হলে কী করা কর্তব্য এইবেলা বলো। এখনো সময় আছে। নাহয় বাবাকে বলে আসি যে, কাব্যের মধ্যে শুধু কথার মিল চাই, সেটাতে ভুল হলেও চলে ; কিন্তু কবির মধ্যে চাই প্রাণের মিল, সেটাতে ভুল হলে সাংঘাতিক। কাজ নেই দিদি, স্বয়ং দেখেশুনে পছন্দ করে নাও। ছবিটা দেখে তার ভূমিকা করতে পারো।

কমল। এর মধ্যে তো একজন দেখছি চন্দরবাবু।

ইন্দু। বাকি দুজনের মধ্যে কে বিনোদবাবু আন্দাজ কর্ দেখি। এর মধ্যে কেই বা কোকিল কেই বা কাক, কেই বা কবি কেই বা অকবি বল্‌ দেখি।

কমল। তোর মতন এমন সূক্ষ্ম দৃষ্টি আমার নেই ভাই!

ইন্দু। আচ্ছা এই নে, তোর ডেস্কের উপর রাখ্‌, চেয়ে দেখতে দেখতে ভক্তের ধ্যানদৃষ্টিতে সত্য আপনি প্রকাশিত হবে। দময়ন্তী ছজনের মধ্যে নলকে চিনে নিয়েছিলেন, তোর তো কেবল দুজন।

কমল। অত চিন্তায় অত ধ্যানে আমার দরকার নেই।

ইন্দু। বলিস কী দিদি!

কমল। আমি তো স্বয়ম্বরা হতে যাচ্ছি নে বোন! তা আমার আবার পছন্দ! দুটো-একটা কাপড়চোপড় ছাড়া জীবনের ক'টা জিনিসই বা নিজের পছন্দ অনুসারে পাওয়া গেছে? আপনাকেই আপনি পছন্দ করে নিতে পারি নি।

ইন্দু। তুই ভাই, কথায় কথায় বড়ো বেশি গম্ভীর হয়ে পড়িস। বিনোদের কাছে যদি অমনি করে থাকিস তা হলে সে তোর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে সাহস করবে না।

কমল। সেজন্য নাহয় তুই নিযুক্ত থাকিস।

ইন্দু। তা হলে যে তোর গাম্ভীর্য আরো সাতগুণ বেড়ে যাবে। দেখ্‌ ভাই, তুই তো একটা পোষা কবি হাতে পেলি, এবার তাকে দিয়ে তোর নিজের নামে কবিতা লিখিয়ে নিস, যতক্ষণ পছন্দ না হয় ছাড়িস নে। নিজের নামে কবিতা দেখলে কিরকম লাগে, কে জানে।

কমল। মনে হয়, আমার নাম করে আর কাকে লিখছে। তোর যদি শখ থাকে আমি তোর নামে একটা লিখিয়ে নেব।

ইন্দু। তুই কেন,সে আমি নিজে করে নেব। আমাদের যে সম্পর্ক আমি যে কান ধরে লিখিয়ে নিতে পারি।