শেষরক্ষা
তিনি গত হয়েছেন সে আজ বছর পাঁচেকের কথা হবে, যা হোক তিরিশটা বৎ সর তাঁকে নিয়ে চালিয়ে এসেছি, আমি আমার ছেলের বউ পছন্দ করতে পারব না আর সে ছোঁড়া ভূমিষ্ট হয়েই আমার চেয়ে পেকে উঠল? তবে যদি তোমার মেয়ের কোনো ধনুর্ভঙ্গ পণ থাকে, আমার গদাইকে যাচিয়ে নিতে চান, সে আলাদা কথা।

নিবারণ। নাঃ, আমার মেয়ে কোনো আপত্তিই করবে না, তাকে যা বলব সে তাই শুনবে। আর-একটি কথা তোমাকে বলা উচিত। আমার মেয়েটির কিছু বয়স হয়েছে।

শিবচরণ। আমিও তাই চাই। ঘরে যদি গিন্নি থাকতেন তাহলে বউমা ছোটো হলে ক্ষতি ছিল না। এখন এই বুড়োটাকে যত্ন করে আর ছেলেটাকে কড়া শাসনে রাখতে পারে, এমন একটি মেয়ে না হলে সংসারটি গেল।

নিবারণ। তা হলে তোমার একটি অভিভাবকের নিতান্ত দরকার দেখছি।

শিবচরণ। হাঁ ভাই, মা ইন্দুকে বোলো আমার গদাইয়ের ঘরে এলে এই বুড়ো নাবালকটিকে প্রতিপালনের ভার তাঁকেই নিতে হবে। তখন দেখব তিনি কেমন মা।

নিবারণ। তা ইন্দুর সে অভ্যাস আছে। বহুকাল একটি আস্ত বুড়ো বাপ তারই হাতে পড়েছে। দেখতেই তো পাচ্ছ,ভাই,খাইয়ে-দাইয়ে বেশ একরকম ভালো অবস্থাতেই রেখেছে।

শিবচরণ। তাই তো। তাঁর হাতের কাজটিকে দেখে তারিফ করতে হয়। যা হোক, আজ তবে আসি। গুটিদুয়েক রোগী এখনো মরতে বাকি আছে।

[ প্রস্থান

ইন্দুমতীর প্রবেশ

 

ইন্দু। ও বুড়োটি কে এসেছিল বাবা?

নিবারণ। কেন মা ‘ বুড়ো বুড়ো ' করছিস — তোর বাবাও তো বুড়ো।

ইন্দু। ( নিবারণের পাকা চুলের মধ্যে হাত বুলাইয়া) তুমি তো আমাদের আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো, তোমার সঙ্গে কার তুলনা? কিন্তু ওকে তো কখনো দেখি নি।

নিবারণ। ওর সঙ্গে ক্রমে খুবই পরিচয় হবে —

ইন্দু। আমি খুব পরিচয় করতে চাই নে।

নিবারণ। তোর এ বাবা পুরোনো ঝর্‌ঝরে হয়ে এসেছে, একবার বাবা বদল করে দেখবি নে ইন্দু?

ইন্দু। তবে আমি চললুম।

নিবারণ। না না, শোন্‌-না। তোরই যেন বাবার দরকার নেই, আমার একটি বাপের পদ খালি আছে — তাই আমি একটি সন্ধান করে বের করেছি মা।

ইন্দু। তুমি কী বকছ বুঝতে পারছি নে।

নিবারণ। নাঃ, তুমি আমার তেমনি হাবা মেয়ে কিনা। সব বুঝতে পেরেছিস, কেবল দুষ্টুমি!