আর্য ও অনার্য
ঠিক স্নানের অব্যবহিত পূর্বেই আমাদের শরীরের মধ্যে ভৌতিক বারণশক্তির উত্তেজনা হয় — এই তো ম্যাগ্‌নেটিজ্‌ম্‌। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজেরা স্নানের পরে যে গায়ে তোয়ালে ঘষে, তার কত হাজার বৎসর আগে আমাদের আর্যদের মধ্যে গামছা দিয়ে গাত্রমার্জন প্রথা প্রচলিত ছিল ভেবে দেখুন দেখি।

লেখকগণ। ( সবিস্ময়ে) আশ্চর্য! ধন্য! আর্যদের কী বিজ্ঞানপারদর্শিতা! আর্য কুণ্ডুমশায়ের কী গবেষণা!

হরিহর। ভালো মূর্খের হাতেই আজ পড়া গিয়েছে। কিন্তু একে চটিয়ে কাজ নেই। নানা কাগজে লিখে থাকে। শুনেছি নাকি এই আর্য কুণ্ডু ভদ্রলোকদের বড্ড গাল দিতে পারে। সেইজন্যেই বিখ্যাত।

চিন্তামণি। ঐ দেখুন — ঐ আর্য ব্রাহ্মণ প্রাতঃকালে যে ফুল তুলছে, কেন তুলছে বলুন দেখি।

অদ্বৈত। পূজার সময় দেবতাকে দেবে বলে।

চিন্তামণি। ছি ছি, আপনারা কিছুই গভীর তলিয়ে দেখেন না। সকালে ফুল তুলতে যখন ঋষিরা অনুমতি করেছেন তখন স্পষ্টই প্রমাণ হচ্ছে যে, বাতাসে অক্সিজেন বাষ্প যে আছে এ তাঁরা জানতেন। তা যখন জানা ছিল, তখন অবশ্য অন্যান্য বাষ্পের কথাও তাঁরা জানতেন সন্দেহ নেই। এইরকম একে একে অতি স্পষ্ট করে প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে, আধুনিক য়ুরোপীয় রসায়নশাস্ত্রের কিছুই তাঁদের অগোচর ছিল না। হাই তোলবার সময় তুড়ি দেওয়া কেন? সেও ম্যাগ্‌নেটিজ্‌ম্‌। উত্তানবায়ুর সঙ্গে আধানশক্তির যোগ হয়ে যখন ভৌতিক বলে পরিচালিত নিধানশক্তি স্বশক্তির প্রভাবে প্রাণ কারণ এবং ধারণ এই তিনটেকে অতিক্রম করতে থাকে তখন সত্ত্ব রজ এবং তম এই তিনেরই ব্যতিক্রমদশা ঘটে। এমন সময়ে মধ্যমা এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ঘর্ষণ-জনিত বায়ব তাপের কারণভূত স্নায়ব তাপ সৌর তাপের সঙ্গে মিলিত হয়ে জীবদেহের ভৌতিক তাপের আত্যন্তিক প্রলয়দশা ঘটতে দেয় না। একে বিজ্ঞান বলে না তো কাকে বিজ্ঞান বলে? অথচ আমাদের আর্য ঋষিগণ ডারুয়িনের কোনো গ্রন্থই পড়েন নি!

লেখকগণ। আশ্চর্য! ধন্য! ধন্য আর্যমহিমা! আমরা এতদিন এ-সকল কথার কিছুই বুঝতুম না!

হরিহর। ( স্বগত ) এবং আজও কিছু বুঝতে পারছি নে!

চিন্তামণি। মাটিতে পাখা ঠোকার বিষয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন তো সেও ম্যাগ্‌নেটিজ্‌ম্‌! সম্প্রসারণ এবং নিঃসারণ, বিপ্রকর্ষণ এবং নিকর্ষণ এই ক'টা ভৌতিক ক্রিয়ার যোগে-

অদ্বৈত। রক্ষা করুন মশায়, আমার মাথা ঘুরছে। পাখা ঠোকার বিষয়ে আপনি আমার কাগজে লিখবেন এখন! আপনি অনেক বকেছেন, আপনাকে একটা পান আনিয়ে দিই।

চিন্তামণি। আজ্ঞে না, আপনার এখেনে আমি পান খেতে পারি নে। আপনি আর্যক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করেন না — যে আধ্যাত্মিক শক্তি আমাদের আর্যনাড়ীতে কুলক্রমাগত প্রবাহিত হয়ে আসছে সেই শক্তি-

অদ্বৈত। মশায়, থাক্‌ মশায়, আপনাকে পান দেব না, আপনি পান নেই খেলেন। অনুমতি করেন তো বরঞ্চ তামাক আনিয়ে দিচ্ছি।

চিন্তামণি। তামাক! কী সর্বনাশ! সে আরো খারাপ! উৎ কৃষ্ট জাতি নিকৃষ্ট জাতির হুঁকোয় তামাক খায় না কেন? এক জাতি আর-এক জাতির স্পৃষ্ঠ অন্ন খায় না কেন? আগে আর্য অনার্যের ছায়া মাড়াতেন না কেন? তার মধ্যে কি বিজ্ঞান নেই? অবশ্য আছে। আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। সেও ম্যাগ্‌নেটিজ্‌ম্‌। উত্তম মধ্যম এবং অধম এই তিন প্রকার দেহজ বিকিরণশক্তি-

অদ্বৈত। থামুন থামুন — তামাক দেব না মশায়, কাজ নেই আপনার তামাক খেয়ে। পানও থাক্‌, তামাকও থাক্‌ — যাতে আপনার সুবিধে হয়, যাতে আপনার দেহজ বিকিরণশক্তি রক্ষা হয়, তাই করুন।

লেখকগণ। ধিক্‌ অদ্বৈতবাবু, আপনি আর্যশ্রেষ্ঠ কুণ্ডুমশায়ের জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতে দিলেন না।