রোগীর বন্ধু
গাঁঠ ফুলে উঠবে, ক্রমে-

বৈদ্যনাথ। ( গলদ্‌ঘর্ম হইয়া) দোহাই আপনার, আর বলবেন না। আমার বুক ধড়াস্‌ ধড়াস্‌ করছে!

দুঃখীরাম। আপনার এইবেলা সাবধান হওয়া উচিত।

বৈদ্যনাথ। উচিত তা যেন বুঝলাম, কিন্তু কী করব বলুন।

দুঃখীরাম। আপনি কি অ্যালোপ্যাথি-মতে চিকিৎসা করাচ্ছেন?

বৈদ্যনাথ। হাঁ।

দুঃখীরাম। কী সর্বনাশ! অ্যালোপ্যাথরা তো বিষ খাওয়ায়, ব্যামোর চেয়ে ওষধ ভয়ানক। যমের চেয়ে ডাক্তারকে ডরাই।

বৈদ্যনাথ। ( শঙ্কিত হইয়া) বটে! তা, কী করব? হোমিওপ্যাথি দেখব?

দুঃখীরাম। হোমিওপ্যাথি তো শুধু জলের ব্যবস্থা।

বৈদ্যনাথ। তবে কি বদ্যি দেখাব?

দুঃখীরাম। তার চেয়ে খানিকটা আফিং তুঁতের জলে গুলে হরতেল মিশিয়ে খান-না কেন?

বৈদ্যনাথ। রাম রাম! তবে কী করা যায় মশায়!

দুঃখীরাম। কিছু করবার নেই, কোনো উপায় নেই এ আপনাকে নিশ্চিত বলছি।

বৈদ্যনাথ। মশায়, আমি রোগা মানুষ, আমাকে এরকম ভয় দেখানো উচিত হয় না।

দুঃখীরাম। ভয় কিসের মশায়? এ সংসারে তো কেবলই দুঃখ কষ্ট বিপদ। চতুর্দিক অন্ধকার। বিষাদের মেঘে আচ্ছন্ন! হা-হুতাশ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না। এখানে আমরা বিষধর সর্পের গর্তে বাস করছি। এখেন থেকে বিদায় হওয়াই ভালো।

নিশ্বাস

বৈদ্যনাথ। দেখুন, ডাক্তার আমাকে সর্বদা আমোদে-আহ্লাদ নিয়ে প্রফুল্ল থাকতে বলেছে। আপনার ঐ মুখ দেখেই আমার ব্যামো যেন হুহু করে বেড়ে উঠছে। আমাকে দেখে আপনার ভাতৃশোক জন্মেছিল, কিন্তু আপনার ঐ অন্ধকার দাড়ি ঝাড়া দিলেই দেড় ডজন পুত্রশোক ঝরে পড়ে। আপনি একটা ভালো কথা তুলুন।

এটা কোন্‌ স্টেশন মশায়?

দুঃখীরাম। এটা মধুপুর। এখেনে এ বৎ সর যেরকম ওলাউঠো হয়েছে সে আর বলবার নয়।

বৈদ্যনাথ। ( ব্যস্ত হইয়া) ওলাউঠো! বলেন কী! এখানে গাড়ি কতক্ষণ থাকে?

দুঃখীরাম। আধ ঘন্টা। এখেনে পাঁচ মিনিট থাকাও উচিত না।

বৈদ্যনাথ। ( শুইয়া পড়িয়া ) কী সর্বনাশ!

দুঃখীরাম। ভয় করা বড়ো খারাপ। ভয় ধরলে তাকে ওলাউঠো আগে ধরে। লরি-সাহেবের বইয়ে লেখা আছে-

বৈদ্যনাথ। আপনি আমাকে ছাড়লে আমার ভয়ও ছাড়ে। আপনি আমার হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়েছেন। আপনি ডাক্তার ডাকুন — আমার কেমন করছে।

দুঃখীরাম। ডাক্তার কোথায়?

বৈদ্যনাথ। তবে স্টেশনমাস্টারকে ডাকুন।

দুঃখীরাম। গাড়ি যে ছাড়ে-ছাড়ে।

বৈদ্যনাথ। তবে গার্ড্‌কে ডাকুন।