শেষরক্ষা

ক্ষান্তমণি। হায় রে, কী শব্দভেদী বাণেরই নমুনা!

ইন্দু। কমলদিদি খাতায় লিখে রেখেছে, এই ওর জপের মন্ত্র। শব্দভেদী বাণের যে জোর কত তা প্রত্যক্ষ দেখতে চাও?

ক্ষান্তমণি। চাই বৈকি, জেনে রাখা ভালো।

ইন্দু। ( নেপথ্যে চাহিয়া) দিদি! দিদি!

সেলাই হাতে কমলের প্রবেশ

কমল। কেন? হয়েছে কী?

ইন্দু। এখনো বিশেষ কিছু হয় নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ? বিধাতা আমাদের চেয়েও পর্দানশীন, আড়ালে বসে বসে তোমার সাধের স্বপ্নকে মূর্তি দিচ্ছেন।

কমল। সে খবর দেবার জন্যে তোমায় ডাকাডাকি করতে হবে না।

ইন্দু। তা জানি ভাই, খবর পাকা হলে বিধাতা আপনিই দূত পাঠিয়ে দেবেন। আমি সেজন্যে ভাবিও নি। সখীপরিষদে আমাকে গান গাইতে ধরেছে। স্বরলিপি থেকে তুমি যে নতুন গানটি শিখেছ আমাকে শিখিয়ে দাও। ক্ষান্তদিদিও সেইজন্যে বসে আছেন — আমি জানি, তোমার গান উনি চন্দ্রবাবুর চটি জুতোর আওয়াজের প্রায় সমতুল্য বলেই জানেন।

ক্ষান্তমণি। ইন্দুর কথা শোনো একবার! এ আবার আমি কবে বললুম!

ইন্দু। তা হলে সমতুল্য বলাটা ভুল হয়েছে, তার চেয়ে নাহয় কিছু নীরসই হল। সে তর্ক পরে হবে, তুমি গান গাও।

কমল।

গান

ডাকিল মোরে জাগার সাথি।

প্রাণের মাঝে বিভাস বাজে,

প্রভাত হল আঁধার রাতি।

বাজায় বাঁশি তন্দ্রাভাঙা,

ছড়ায় তারি বসন রাঙা,

ফুলের বাসে এই বাতাসে

কী মায়াখানি দিয়েছে গাঁথি।

গোপনতম অন্তরে কী

লেখনরেখা দিয়েছে লেখি!

মন তো তারি নাম জানে না,

রূপ আজিও নয় যে চেনা,

বেদনা মম বিছায়ে দিয়ে

রেখেছি তারি আসন পাতি।

ইন্দু। ক্ষান্তদিদি, ঐ চেয়ে দেখো, বাণ পৌঁচেছে!

ক্ষান্তমণি। কোথায়?

ইন্দু। আমাদের এই গলির আকাশ পার হয়ে, ঠেকেছে গিয়ে তোমাদের বাড়ির ঐ দরজাতে।