প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মন্ত্রী। মহারাজ! ঐ তো দেখি যুবরাজ আসছেন।
প্রতাপ। তাই তো, পালায় নি তবে।
উদয়াদিত্যের প্রবেশ
প্রতাপ। কী, তুমি যে মুক্ত দেখি?
উদয়। কেমন করে বলব মহারাজ। কারাগার পুড়লেই কি কারাগার যায়।
প্রতাপ। তুমি যে পালিয়ে গেলে না?
উদয়। মেয়াদ না ফুরোলে পালাব কী করে। মহারাজের সঙ্গে আমার যে চিরবন্ধনের সম্বন্ধ, সেটা যখন নিজে ছিন্ন করে দেবেন সেইদিনই তো ছাড়া পাব।
প্রতাপ। তোমাকে ত্যাগ ক'রে?
উদয়। তা ছাড়া আর কী বলব। আমাকে গ্রহণ করে আমাদের তো কারো কোনো সুখ নেই।
প্রতাপ। তুমি অথচ সিংহাসনের যোগ্য নও, সেই সিংহাসনে তোমার অধিকার আছে, এর থেকেই যত দুঃখ। যেখানে যার স্থান নয় সেইখানেই তার বন্ধন।
উদয়। না মহারাজ, আমি যোগ্য নই। আপনার এই সিংহাসন হতে আমাকে অব্যাহতি দিন এই ভিক্ষা।
প্রতাপ। তুমি যা বলছ তা যে সত্যই তোমার হৃদয়ের ভাব তা কী করে জানব।
উদয়। আজ আমি মা-কালীর চরণ স্পর্শ করে শপথ করব, আপনার রাজ্যের সূচ্যগ্র ভূমিও আমি কখনো শাসন করব না ; সমরাদিত্যই আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী।
প্রতাপ। তুমি তবে কী চাও
উদয়। মহারাজ, আমি আর কিছুই চাই নে-কেবল আমাকে পিঞ্জরের পশুর মতো গারদে পুরে রাখবেন না। আমাকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করুন, আমি একাকী কাশী চলে যাই।
প্রতাপ। আচ্ছা বেশ। আমি এর ব্যবস্থা করছি।
উদয়। আমার আর-একটি প্রার্থনা আছে মহারাজ। আমি বিভাকে নিজে তার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবার অনুমতি চাই।
প্রতাপ। তার আবার শ্বশুরবাড়ি কোথায়।
উদয়। তাই যদি মনে করেন তবে সেই অনাথা কন্যাকে আমার কাছে থাকবার অনুমতি দিন। এখানে
তো তার সুখও নেই, কর্মও নেই।
প্রতাপ। তার মাতার কাছে অনুমতি নিতে পার।
[ মন্ত্রীর প্রস্থান
মহিষী ও বিভার প্রবেশ
মহিষী। উদয় কি বেঁচে আছে।
প্রতাপ। ভয় নেই। বেঁচে আছে। তুমি এখানে যে?
মহিষী। পারব কেন থাকতে। শুনলুম কারাগারে আগুন লেগেছে। উদয়, বাবা আমার, এখন ঘরে চল্।
উদয়। আমার ঘর নেই। আমি যাচ্ছি কাশী।
মহিষী। সে কী কথা। তা হলে আমাকে মেরে ফেলে যা।