চার অধ্যায়

অতীন বললে “অখিল গেছে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।”

“আর সেই লোকটি?”

“তাকেও দিয়েছি ছেড়ে। সে বসে বসে ভাবছিল কাজে ফাঁকি দিয়ে আমি বুঝি কেবল গল্পই করছি। যেন নতুন একটা আরব্য উপন্যাস শুরু হয়েছে। আরব্য উপন্যাসই বটে। সমস্তটাই গল্প, একেবারেই আজগবি গল্প। ভয় করছে এলা? আমাকে ভয় নেই তোমার?”

“তোমাকে ভয়, কী যে বল।”

“কী না করতে পারি আমি! পড়েছি পতনের শেষ সীমায়। সেদিন আমাদের দল অনাথা বিধবার সর্বস্ব লুঠ করে এনেছে। মন্মথ ছিল বুড়ির গ্রামসম্পর্কে চেনা লোক– খবর দিয়ে পথ দেখিয়ে সে-ই এনেছে দলকে। ছদ্মবেশের মধ্যেও বিধবা তাকে চিনতে পেরে বলে উঠল, মনু, বাবা তুই এমন কাজ করতে পারলি? তার পরে বুড়িকে আর বাঁচতে দিলে না। যাকে বলি দেশের প্রয়োজন সেই আত্মধর্মনাশের প্রয়োজনে টাকাটা এই হাত দিয়েই পৌঁচেছে যথাস্থানে। আমার উপবাস ভেঙেছি সেই টাকাতেই। এতদিন পরে যথার্থ দাগি হয়েছি চোরের কলঙ্কে, চোরাই মাল ছুঁয়েছি, ভোগ করেছি। চোর অতীন্দ্রের নাম বটু ফাঁস করে দিয়েছে। পাছে
প্রমাণাভাবে শাস্তি না পাই বা অল্প শাস্তি পাই সেইজন্য পুলিস-সুপারিন্টেণ্ডেন্টের মারফত সে-মকদ্দমা ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দায়ের না হয়ে যাতে বাঙালি জয়ন্ত হাজরার এজলাসে ওঠে কমিশনরের কাছ থেকে সেই হুকুম আনাবে বলে মন্ত্রণা করে রেখেছে।
সে নিশ্চিত জানে, কাল ধরা পড়বই। ইতিমধ্যে ভয় কোরো আমাকে, আমি নিজে ভয় করি আমার মৃত আত্মার কালো ভূতটাকে। আজ তোমার ঘরে কেউ নেই।”

“কেন, তুমি আছ।”

“আমার হাত থেকে বাঁচাবে কে?”

“নাই বা বাঁচালে।”

“তোমারই আপন মণ্ডলীতে একদিন যারা ছিল এলাদির সব দেশভাই– ভাইফোঁটা দিয়েছ যাদের কপালে প্রতিবৎসর– তাদেরই মধ্যে কথা উঠেছে যে তোমার বেঁচে থাকা উচিত নয়।”

“তাদের চেয়ে বেশি অপরাধ আমি কী করেছি?”

“অনেক কথা জান তুমি, অনেকের নামধাম। পীড়ন করলে বেরিয়ে পড়বে।”

“কখনোই না।”

“কী করে বলব যে-মানুষটা এসেছিল আজ, এই হুকুম নিয়েই সে আসে নি? হুকুমের জোর কত সে তো জান তুমি।”

এলা চমকে উঠে বললে, “সত্যি বলছ অন্তু, সত্যি?”

“একটা খবর পেয়েছি আমরা।”

“কী খবর?”

“আজ ভোররাত্রে পুলিস আসবে তোমাকে ধরতে।”

“নিশ্চিত জানতুম একদিন পুলিস আমাকে ধরতে আসছে।”

“কেমন করে জানলে?”

“কাল বটুর চিঠি পেয়েছি, সে খবর দিয়েছে পুলিস আমাকে ধরবে, লিখেছে– সে এখনও আমাকে বাঁচাতে পারে।”

“কী উপায়ে?”