ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
১৫
হম, সখি, দারিদ নারী।
জনম অবধি হম পীরিতি করনু, মোচনু
লোচনবারি।
রূপ নাহি মম, কছুই নাহি গুণ, দুখিনী আহির জাতি–
নাহি জানি কছু বিলাস-ভঙ্গিম
যৌবনগরবে মাতি–
অবলা রমণী, ক্ষুদ্র হৃদয় ভরি
পীরিত করনে জানি।
এক নিমিখ পল নিরখি শ্যাম জনি, সোই বহুত করি মানি।
কুঞ্জপথে যব নিরখি সজনি হম
শ্যামক চরণক চীনা
শত শত বেরি ধূলি চুম্বি সখি,
রতন পাই জনু দীনা।
নিঠুর বিধাতা, এ দুখজনমে মাঙব কি তুয়া-পাশ।
জনম-অভাগী উপেখিতা হম
বহুত নাহি
করি আশ–
দূর থাকি হম রূপ হেরইব, দূরে শুনইব বাঁশি,
দূর দূর রহি সুখে নিরীখিব শ্যামক মোহন হাসি।
শ্যামপ্রেয়সি রাধা! সখি লো! থাক’ সুখে চিরদিন–
তুয়া সুখে হম রোয়ব না সখি,
অভাগিনী গুণহীন।
আপন দুখে, সখি, হম রোয়ব লো, নিভৃতে মুছইব বারি।
কোহি ন জানব, কোন বিষাদে
তন-মন দহে হমারি।
ভানুসিংহ ভনয়ে, শুন কালা,
দুখিনী অবলা বালা–
উপেখার অতি তিখিনী বাণে
না দিহ না
দিহ জ্বালা॥