গোরা
ধরে তোমার ঐ গুরুর কাছে আমাকে নিয়ে যাও।”

এই বলিয়া গোরা তাহার দিকে দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিয়া অগ্রসর হইয়া গেল। সুচরিতা চৌকি হইতে উঠিয়া গিয়া নিজের হস্ত তাহার হাতে স্থাপন করিল। তখন গোরা সুচরিতাকে লইয়া পরেশকে প্রণাম করিল।



পরিশিষ্ট

গোরা সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া দেখিল— আনন্দময়ী তাঁহার ঘরের সম্মুখে বারান্দায় নীরবে বসিয়া আছেন।

গোরা আসিয়াই তাঁহার দুই পা টানিয়া লইয়া পায়ের উপর মাথা রাখিল। আনন্দময়ী দুই হাত দিয়া তাহার মাথা তুলিয়া লইয়া চুম্বন করিলেন।

গোরা কহিল, “মা, তুমিই আমার মা। যে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলুম তিনিই আমার ঘরের মধ্যে এসে বসে ছিলেন। তোমার জাত নেই, বিচার নেই, ঘৃণা নেই— শুধু তুমি কল্যাণের প্রতিমা। তুমিই আমার ভারতবর্ষ।—

“মা, এইবার তোমার লছমিয়াকে ডাকো। তাকে বলো আমাকে জল এনে দিতে।”

তখন আনন্দময়ী অশ্রুব্যাকুলকণ্ঠে মৃদুস্বরে গোরার কানের কাছে কহিলেন, “গোরা, এইবার একবার বিনয়কে ডেকে পাঠাই।”